ভোর রাত থেকেই সাজ সাজ রব। কোথাও কমব্যাট ফোর্স। কোথাও আইআরবি। গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে চলল তল্লাশি। রেলযাত্রী থেকে বাইক আরোহী কেউই ছাড় পেলেন না। জনে জনে জিজ্ঞেস চলল, ‘কেউ কি গ্রেটার সমর্থক?’। বার বার ঊত্তর এল ‘না’।
তবুও সন্ধ্যে পর্যন্ত হাল ছাড়ল না পুলিশ। রবিবার দিনভর কোচবিহার জেলার মোড়ে মোড়ে গ্রেটার সমর্থক ও নারায়ণী সেনার খোঁজ জারি রাখল পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, ভেটাগুড়ি সহ দিনহাটা, সিতাই, শীলতলখুচি, তুফানগঞ্জের একাধিক জায়গায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা লাঠি হাতে বাসে বাসে গ্রেটার সমর্থকের খোঁজে তল্লাশি চালায়। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তারা বিষয়টি জানে না। রাজ্য পুলিশের কোচবিহারের ডিআইজি রাজেশ যাদব বলেন, “সমস্ত জায়গায় পুলিশ রয়েছে। কোথাও গণ্ডগোলের খবর নেই। কেউ অশান্তি করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দাবি করেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। তিনি বলেন, “তৃণমূল কর্মীরা কোথাও তল্লাশি চালায়নি। পুলিশ–প্রশাসন সর্বত্র রয়েছে। কেউ অশান্তি করার চেষ্টা করলে, তারাই ব্যবস্থা নেবে। দলের কর্মীদের নামে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
গ্রেটার সমর্থকদের এ দিন কোথাও দেখা যায়নি। বড়গিলায় গ্রেটার নেতা অনন্ত রায় (মহারাজ নামে যিনি পরিচিত) যে বাড়িতে থাকেন, সেটাও ছিল অনেকটা সুনসান। অন্য দিন বাড়ি ভর্তি মানুষজন থাকেন। ‘মহারাজ’ নিজেও বাড়িতে থাকেন। এদিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দলের কোচবিহার জেলা কমিটির কয়েকজন নেতা ও কর্মীকে সেখানে দেখা যায়। সেই বাড়ি সামনেও মোতায়েন ছিল পুলিশ। পুলিশের অনুমতি ছাড়া কেউ ওই বাড়িতেও ঢুকতে পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ। গ্রেটারের কোচবিহার জেলা সম্পাদক পরেশ বর্মন বলেন, “আমরা তো আগেই জানিয়ে দিয়েছি, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান করব না। তার পরেও কেন এত পুলিশ তা জানি না। পুলিশ কর্তারাই তা বলতে পারবেন।” এক গ্রেটার নেতা বলেন, “পুলিশ-প্রশাসনের উপর আস্থা রয়েছে। কোথাও সংগঠনের কেউ আক্রান্ত হলে তারাই ব্যবস্থা নেবে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা নেতা হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরোক্ষ ভাবে অলিখিত জরুরি অবস্থা জারি করেছে কোচবিহার। পুলিশ ও তৃণমূল কর্মীরা নানা জায়গায় বাস থামিয়ে গ্রেটারের খোঁজে তল্লাশি করছে। এটার মানে কী? যেখানে গ্রেটার স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে তারা অনুষ্ঠান করছে না। প্রস্তুতি থেকেও বিরত থেকেছে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন এদিন ২৮ অগস্ট ভারত ভুক্তি চুক্তি দিবস পালনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে। চকচকার শিল্পতালুকের মাঠে ওই অনুষ্ঠানে গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অহলুওয়ালিয়াকে গার্ড অফ অনার দেওয়ার কথা ছিল নারায়ণী সেনার। পুলিশ ঝুঁকি নিতে চায়নি। শনিবার থেকেই নিরাপত্তার চাদড়ে মুড়ে দেওয়া হয় কোচবিহার জেলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy