কোচবিহারের এটিএমের সামনে লাইনের ছবি অপরিবর্তিত। — নিজস্ব চিত্র
দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক-এটিএমের সামনে লাইন কমেনি। নিত্যদিন নতুন সমস্যায় জেরবার হয়ে চলেছেন গ্রাহকরা। কোথাও খুচরো জোগাড় করার সমস্যা, কোথাও বা প্রবীণ নাগরিকদের দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ।
‘মেশিন বিকল’
কোচবিহারের একটি ব্যাঙ্কের শাখা টাকা তুলতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে, এ দিন মঙ্গলবার পথ অবরোধও হয়েছে। ম্যানেজারকে ব্যাঙ্কে ঢুকতে না দিয়ে রাস্তায় বসিয়ে রাখে ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের কয়েকজন। এটিএম কিয়স্কের সামনে ‘টাকা নেই’, ‘মেশিন বিকল’-এর বোর্ডের সঙ্গে এ দিন দেখা গিয়েছে ‘শুধু ২ হাজার’ লেখা বোর্ডও। টাকা তুলতে পারলেও, ২ হাজার টাকার নোটের খুচরো জোগাড় করতেই নাকাল হতে হয়েছে গ্রাহকদের। সকাল হোক বা রাত এটিএমের সামনে সর্ব ক্ষণ লাইন। টাকা তুলতে বা বদল করতে গেলে প্রবীণ নাগরিকদের নানা অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা করা হলেও, কার্যক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
জোগান কম
এ দিন কোচবিহারে ছিল লোকসভা উপনির্বাচনের ভোট গণনা। উত্তেজনা ছড়াতে পারে আশঙ্কায় জেলার শহর-গ্রামে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে ভোট নিয়ে নয়, কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে টাকা না পেয়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা পথ অবরোধ শুরু করে। সকাল এগারোটা থেকে অবরোধ শুরু হয়। টাকা না পেলে ভাঙচুরের হুমকি দিতে তাকেন অনেকে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকা। ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে তাঁর অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। অবরোধ স্থলেই বেঞ্চ পেতে ম্যানেজারকে বসিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোচবিহারের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার বলেন, “টাকার জোগান চাহিদার তুলনায় কম বলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
কোথাও ২, কোথাও ৫
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়েও হাতে সরকারি নির্দেশ মতো টাকা মিলছে না। এ দিন জলপাইগুড়ির প্রধান ডাকঘরে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের প্রশ্ন, ‘‘সরকারি সংস্থাতেই সরকারি নির্দেশ মানা হচ্ছে না।’’ কর্তৃপক্ষের দাবি, টাকার পর্যাপ্ত জোগান নেই। কোচবিহারে চেকের বিনিময়ে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বাধিক ২৪ হাজার টাকাও বেশিরভাগ ব্যাঙ্কে মেলেনি। চাকিরবাজার লাগোয়া একটি ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত টাকা নেই। তাই এ দিন ৫ হাজারের বেশি টাকা মাথা পিছু কোনও গ্রাহককে দেওয়া যায়নি।
কেবল পাঁচশো
চাঁচলে থাকা রামপ্রসাদ সিকদারকে দিনভর টাকার খোঁজে নাকাল হতে হয়েছে। তিনি এ দিন সকালে গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ঘন্টা তিনেক বাদে যখন ক্যাশ কাউন্টারে পৌঁছলেন তখন পেলেন মাত্র পাঁচশো টাকা। নদিয়ার বাসিন্দা রামপ্রসাদবাবু শিক্ষকতা করেন, চাঁচলে থাকেন। সামান্য টাকা দিনে ক’দিন তার খাই খরচই চলবে কী করে। ছুটলেন এটিএমে। সেখানে আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর শুনলেন, টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। দিনের শেষে তাঁর মন্তব্য, ‘‘চাকরি করব না কি দিনভর টাকার খোঁজে দৌঁড়ব সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
মশা মারার উদ্যোগ
সকাল, দুপুর সন্ধ্যে বা রাত যে কোনও সময়েই এটিএমের সামনে ভিড়। তাই দেখে এটিএম কিয়স্কের আশেপাশে থাকা নর্দমায় মশা মারার ওষুধ বেশি করে ছড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে রায়গঞ্জ পুরসভা। সেই মতো মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তার ধারে এটিএমের সামনের নিকাশি নালায় এ দিন রায়গঞ্জ পুরসভার কর্মীরা ‘ফগিং’ চালিয়েছেন। যন্ত্রের সাহায্য ধোঁয়া ছড়ানো হয়েছে পুরসভার প্রশাসক থেণ্ডুপ নামগিয়েল শেরপা বলেন, ‘‘বাসিন্দারা টাকা তোলার জন্য দীর্ঘ ক্ষণ এটিএমগুলির সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। তাই তাঁদের যাতে মশা না কামড়ায় সে জন্য মশা মারার চেষ্টা চলছে।’’ এক গ্রাহকের কথায়, ‘‘যাক লাইনে দাঁড়িয়ে এ বার থেকে অন্তত মশার কামড় খেতে না-ও হতে পারে। অন্তত এই দুর্ভোগটা তো কমল।’’
প্রবীণেরাও দুর্ভোগে
ভোগান্তি থেকে ছাড় মেলেনি প্রবীণ নাগরিকদেরও। লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রবীণ নাগরিকদেরও। শিলিগুড়ির সারদাপল্লির বাসিন্দা প্রবীণ নাগরিক এক দম্পতি বিকাশ গোস্বামী এবং অঞ্জলি গোস্বামী এ দিন বেলা ১২টা থেকে দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোমর ব্যথা হয়ে আসছিল বলে অভিযোগ ধরণী পালেরও। একই পরিস্থিতি প্রবীণ নাসিরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর। শিলিগুড়ি পুরসভার কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও একই দুর্ভোগ হয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে না বলে দাবি করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy