শোকার্ত: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভারতীর পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
কুমারগ্রামের মেয়ে ছিলেন তিনি। কেএলও তে নাম লেখানোর পর জঙ্গি শিবিরে প্রশিক্ষণ পর্বে আলাপ পছন্দের মানুষের সঙ্গে। তারপর বিয়ে। কিন্তু স্বাভাবিক ঘরকন্না করা হয়নি কখনও। ১৯৯৯ সালে ধরা পড়েছিলেন পুলিশের হাতে। ২০০৬ সাল নাগাদ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ স্বামীকে খুঁজে আনার শর্তে ছাড়া পান। তারপর থেকেই পুলিশ আর নাগাল পায়নি তাঁর। যখন খোঁজ মিলল তখন আর দেহে প্রাণ নেই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সোমবার ময়নাতদন্ত হয় কেএলওর কমান্ডার-ইন-চিফ জীবন সিংহের স্ত্রী ভারতী দাসের।
শীর্ষ নেতার স্ত্রী,এই পরিচয় বাদেও সংগঠনে ভারতী-র নিজস্ব পরিচিতি ছিল। এক সময়ের সহযোদ্ধা এবং নেতা-র স্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন টম অধিকারী সহ বহু আত্মসমর্পনকারী এবং জামিনে মুক্ত কেএলও সদস্যরা। এসেছিলেন জীবন সিংহের বোন সুমিত্রা এবং তাঁর স্বামী ধনঞ্জয়ও। রবিবার রাতে জীবন সিংহের স্ত্রীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে আসার খবরে শিলিগুড়ি সহ লাগোয়া এলাকায় শুরু হয় নাকা তল্লাশি। এ দিন সকাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ চত্বর ছেয়ে ছিল সাদা পোশাকের পুলিশ এবং গোয়েন্দায়।
পুলিশের একটি সূত্রের খবর নেপালে মাওবাদীদের আশ্রয়ে ছিল ভারতী। তবে কী মাওবাদীরাই তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে দিল। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানানো হয়েছে ভারতীকে যখন নিয়ে আসা হয় তখন তিনি মৃত। তবে কি নেপালেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, নেপালের চারালি এলাকার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে গত এক সপ্তাহ রেখা রাজবংশী নাম নিয়েই ভর্তি ছিলেন ভারতী। শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকায় তাকে শিলিগুড়ির কোনও নার্সিংহোমে এনে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আত্মসমপর্ণকারী এবং বর্তমানে মূলস্রোতে থাকে কেএলও সদস্যদের মাধ্যমেই খবর পৌঁছে যায় রাজ্য পুলিশের ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপে’র (এসওজি) কাছে। তাদের মধ্যস্থতায় ভারতীর সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দেওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। তাই সোজা নেপাল সীমান্ত থেকে দু’ দফায় গাড়ি বদল করে ভারতীকে রবিবার রাতে আনা হয় মাটিগাড়ায়।
অন্য একটি সূত্র অবশ্য দাবি করেছে, ভারতীর মৃত্যু হওয়ায় পরিকল্পনা বদল করে তাকে সরকারি জায়গায় নিয়ে আসা হয়। নইলে তাকেও অন্যত্র চিকিৎসা করিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতলব ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারা কী ভাবে ‘কার’ নির্দেশে কাজ করছিলেন তা পুলিশ ও গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ শুধু বলেছেন, ‘‘নেপাল থেকে ভারতীকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আনা হয়েছিল। বাকিটা আমরা তদন্ত করে দেখছি। ওর দুই মেয়েকে হোমে রাখা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy