পার্থ রায়।
পিকনিকে গোলমালের জেরে পুলিশের সামনেই এক তৃণমূল নেত্রীর ছেলেকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার আশিঘর মোড় লাগোয়া এলাকার ঘটনা। মারধরে জখম হয়েছেন আরও দুই যুবক। পুলিশ জানায়, নিহত যুবকের নাম পার্থ রায় (২১)। তিনি শিলিগুড়ির সূর্যসেন কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর মা পপিদেবী শিলিগুড়ি পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচিত তৃণমূল নেত্রী। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। যারা আশিঘর এলাকার তৃণমূল কর্মী বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। দীপজ্যোতি সেনের মাথায় আঘাত রয়েছে। বিবেক সরকারের ডান হাত গুরুতর জখম। বাসিন্দারা আরও অভিযোগ করেছেন, খুনের ঘটনায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারও জড়িত।
এলাকার অনেকেরই অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশকে সামনে রেখে আশিঘর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় তোলাবাজি চালান ফাঁড়ির পুলিশকর্মীদের একাংশ। বাসিন্দাদের একাংশের আরও অভিযোগ, ফাঁড়ির কয়েকজনের মদতেই ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে ওঠা ওই তৃণমূলকর্মীরা ছোটখাট বচসার পরে পুলিশের সামনেই দলেরই পুর এলাকার এক নেত্রীর ছেলেকে পিটিয়ে মারার সাহস পেয়েছেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘পিকনিক স্পটে যাতে গোলমাল না হয়, সে জন্য পুলিশ টহল দেয়। এ ক্ষেত্রেও তো পুলিশ ছিল। সব রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে।’’
শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। যারা পিটিয়ে মেরেছেন তাদের কড়া শাস্তি দিতে হবে।’’ সেই সঙ্গেই অশোকবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে এলাকার অনেকে অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা সত্যি হলে তো ভয়ঙ্কর দিকে চলে যাবে পরিস্থিতি।’’
পার্থের রক্ত মাখা জ্যাকেট হাতে।
যা শোনার পরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রঞ্জনবাবুর অভিযোগ, ‘‘মর্মান্তিক একটি মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছেন অশোকবাবু। যে মারা গিয়েছে সে আমার ভাইয়ের মতো। তা নিয়ে অসভ্যের মতো কথাবার্তা বলছেন। আশিঘরের মানুষ তাতে ক্ষুব্ধ। কারণ, সকলে জানেন, আমরাও দোষীদের গ্রেফতার করে সাজা দেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছি।’’ এরপরে তাঁর সংযোজন, ‘‘এখন কিছু হলেই তৃণমূলের নাম জড়ানোর চেষ্টা হয়। যুযুধান দু’পক্ষই তৃণমূল বলে দাবি করে থাকে। এর বেশি কী বলব।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ভক্তিনগর থানার আশিঘর ফাঁড়ির অধীনে ফকদইবাড়ি এলাকায় পিকনিকে গিয়েছিলেন সুভাষপল্লি-বাগরাকোট-ডাবগ্রাম এলাকার জনা ২০ যুবক। শহরের একদম কাছে হওয়ায় বাইকেই পিকনিকে গিয়েছিলেন তাঁরা। পিকনিকে স্থানীয় কিছু যুবকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিবেক। তাঁকে মারধরও করে এলাকার পাঁচ যুবক। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যান বন্ধু্রা। তাঁরাও পাল্টা মারেন অভিযুক্তদের। এরপরেই সংখ্যায় কম থাকায় তখনকার মতো এলাকা ছেড়ে চলে যায় স্থানীয়রা। পরে বিকেল পাঁচটার পরে পিকনিক সেরে বাকিরা ফিরে গিয়েছিলেন। একটি বাইকে এক সঙ্গে ছিলেন পার্থ, বিবেক ও দীপজ্যোতি। বাইকটি দীপজ্যোতির। তিনিই চালাচ্ছিলেন। সেই সময় আশিঘর ফাঁড়ির কাছেই তাঁদের লক্ষ করে ঢিল ছুড়তে থাকে এলাকার জনা ২০-২৫ যুবক।
জখম দীপজ্যোতি বলেন, ‘‘মাথায় পাথরের আঘাত লাগায় আমি বাইক নিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাই। এরপরেই কাঠের বাটাম, বাঁশ নিয়ে আমাদের আক্রমণ করে।’’ তাঁদেরই এক সঙ্গী দীপায়ন বণিকের অভিযোগ, ‘‘আমরা বিবেকের ফোন পেয়ে ছুটে যাই। আমরাই ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের প্রথমে শিলিগুড়ি হাসপাতালে ও পরে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। নার্সিংহোমেই ভোর চারটেয় পার্থর মৃত্যু হয়েছে।’’ নিহতের বাবা মাধবচন্দ্র রায় পেশায় গাড়িচালক। তিনি বলেন, ‘‘আমি ছেলের পিকনিক যাওয়ার ব্যপারে কিছুই জানতাম না। সন্ধ্যা ৭ টায় খবর পাই। কারা ওকে মারধর করেছে বলে শুনি। সরাসরি হাসপাতালে গিয়েই ওকে দেখি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy