Advertisement
০২ জুলাই ২০২৪
Siliguri Municipal Corporation

কাউকে রেয়াত নয়! অবৈধ নির্মাণ নিয়ে মমতার নির্দেশ পালনে উদ্যোগী শিলিগুড়ির মেয়র, খোঁচা বিধায়কের

শিলিগুড়ির শহরের এসএফ রোড, বর্ধমান রোড, সেবক রোড, বিধান মার্কেট এবং হংকং মার্কেট এলাকায় পরিকল্পনাহীন এবং অবৈজ্ঞানিক ভাবে অসংখ্য বহুতল গড়ে ওঠার অভিযোগ বেশ পুরনো।

Mamata Banerjee Gautam Deb and Sankar Ghosh

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম দেব, শঙ্কর ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

পার্থপ্রতিম দাস
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ ১৯:৫৮
Share: Save:

শিলিগুড়ি শহরের বুকে অসংখ্য অবৈধ নির্মাণ নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সোমবার নবান্ন প্রশাসনিক সভাতেই শিলিগুড়ি পুরসভার কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তার পরেই শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব হুঁশিয়ারি দিয়ে জানালেন, কাউকে রায়াত করা হবে না।

শিলিগুড়ির শহরের এসএফ রোড, বর্ধমান রোড, সেবক রোড, বিধান মার্কেট এবং হংকং মার্কেট এলাকায় পরিকল্পনাহীন এবং অবৈজ্ঞানিক ভাবে অনেক বহুতল গড়ে ওঠার অভিযোগ বেশ পুরনো। এ নিয়ে একাধিক বার পদক্ষেপও করতে দেখা গিয়েছে পুরসভাকে। মেয়র জানাচ্ছেন, প্রতি মাসেই একাধিক অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কর্মসূচি থাকে পুরসভার।

কিন্তু কোথাও কোথাও খোদ তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই অবৈধ নির্মাণ গড়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন পুরকর্মীরা। এ বার সেই সমস্ত নির্মাণ ভেঙে দিয়ে নজির তৈরির চেষ্টায় পুরসভা। পুরসভার একটি সূত্রে দাবি, ৪৭টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার নিয়ম বহির্ভূত বাড়ি ভেঙে পূর্বতন বাম পরিচালিত বোর্ডের চেয়ে রেকর্ডও তৈরি করেছে তারা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শুধু নিয়ম বহির্ভূত বাড়িই কেন? কেন অবৈধ বাণিজ্যিক নির্মাণগুলোর ক্ষেত্রে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না? শহরের প্রধান সড়কগুলোর উপরে তৈরি বাণিজ্যিক বহুতলগুলির জন্য যানজট সমস্যার মোকাবিলায় অসুবিধা হচ্ছে। কোথাও বহুতল তৈরি করেছে যে নির্মাণ সংস্থা, তারা পার্কিংয়ের কোনও বন্দোবস্ত করছে না। কিন্তু নিয়মই হল বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করার জন্য জমির ৪০ শতাংশের মধ্যে নির্মাণ শেষ করতে হবে। বাকি ৬০ শতাংশ ব্যবহৃত হবে অন্য কাজে। সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বহুদিন ধরে একের পর এক বহুতল উঠছে শিলিগুড়িতে। এমনকি, পার্কিংয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে দোকান বানানোর জন্য। বন বিভাগের জমি দখল করে নির্মাণের ছবিও দেখা গিয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে কী ভাবে ছাড়পত্র দিচ্ছে পুরসভা? সবচেয়ে বড় বিষয় হল, খোদ পুরনিগনের উল্টো দিকেই বিশাল একটি বাণিজ্যিক নির্মাণ রয়েছে। পার্কিংয়ের নিয়মের তোয়াক্কা না-মেনে দুই এবং চারচাকার গাড়ি দাঁড় করানো হচ্ছে সরকারি জমির উপরে।

সোমবার কলকাতার বৈঠক সেরে শিলিগুড়ি ফিরে প্রথমেই পুরনিগমের কমিশনার-সহ নির্মাণ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র। পরে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দু’বছর পুরনিগম চালাচ্ছি। তার মধ্যে নির্বাচন-সহ একাধিক কারণে বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু গত ৪০ বছরে যা হয়নি, তা আমরা দু’বছরের মধ্যে অনেকটাই করেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বড় বড় বাণিজ্যিক নির্মাণ, পার্কিংয়ের জায়গাকে বদলে বিল্ডিং তৈরি, ছাদে রেস্তরাঁ, পানশালা বানানো— এগুলোর কোনও কিছুকেই রেয়াত করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন সেই সব কাজই তড়িৎ গতিতে হবে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের বিষয়গুলো তিনি মানবিক দৃষ্টিতে দেখেন। তার জন্য আইন আছে। কিন্তু যাঁরা এগুলো (অবৈধ নির্মাণ) করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছেন, তাঁদের কাউকে ছাড় নয়।’’

মেয়র জানিয়েছেন বর্ধমান রোডের উপরে একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে পানশালা তৈরি হয়েছিল। তাদের নোটিস দেওয়া হয়েছে। আগামিকাল (বুধবার) থেকে সেগুলো ভাঙা হবে। সিসি (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট) নেওয়ার পর এরা কিছু করে না। কটাক্ষ করে গৌতম বলেন, ‘‘কায়দাটা খুব ভাল। সিসি নেওয়ার পরেই এগুলো করা হয়। এ সব ক্ষেত্রে কলকাতার (পুরসভা) সুবিধা। তারা জলের লাইন কেটে দিতে পারে। কিন্তু, আমাদের এখানে সেই সুবিধা নেই। কিন্তু সিসি নেওয়ার পরে যেখানে এমন অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি, সেই নির্মাণ ভেঙেছি।’’

যদিও এই ইস্যুতে মেয়রকে একহাত নিয়েছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘একটা বিল্ডিং ভেঙে একশো অবৈধ নির্মান দাঁড় করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পুর বোর্ড। মেয়রের প্রতি সম্মান জানিয়েই এ কথা বলছি... এতটা অসহায় মেয়র আমি আগে দেখিনি। উনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন পুরনিগম ওঁর কন্ট্রোলে নেই। বিল্ডিংয়ে উচ্চতার সঙ্গে ‘কম্প্রোমাইজ়’ করে ফ্লোর তৈরি হচ্ছে। আমার কাছেও এমন বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। বড় বড় বাণিজ্যিক নির্মাণের ক্ষেত্রেই এগুলো বেশি হচ্ছে। আজ না হোক কাল, এই সমস্ত অভিযোগ নিয়েই আমি রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সাহেবের কাছে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE