পুরস্কৃত: নমিতাকে পুষ্পস্তবক দিচ্ছেন সাংসদ। নিজস্ব চিত্র
পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিছু কখনও ভাবেনি নমিতা। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বিয়ের কথা শোনে পরের দিনই তার বিয়ে। আর কিছু ভাবেনি সে। এক মুহূর্তেই বাড়ি ছেড়ে সোজা চলে যায় থানায়। পুলিশের হস্তক্ষেপে আর বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়নি নমিতাকে।
কোচবিহারের মাথাভাঙার এক প্রত্যন্ত গ্রাম হাজরাহাটের ওই ছাত্রীর এমন ঘটনার চাউর হতেই ভিড় পড়ে যায় বাড়িতে। সে হয়ে ওঠে নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদের প্রতীক। শুক্রবার তাই মাথাভাঙার ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পুরস্কৃত করা হল নমিতাকে। তাকে সামনে রেখেই জেলা জুড়ে নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর দাবিও উঠল।
এ দিন কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “নাবালিকা বিয়ে আমাদের সমাজে এক অভিশাপ। এর বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চলছে। দশম শ্রেণির ছাত্রী নমিতা যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে তা আমাদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত। কোচবিহার জেলায় তাঁকে সামনে রেখে প্রচার করার বিষয়ে প্রশসানের সঙ্গে আলোচনা করব।” মাথাভাঙা-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তালেব আজাদ জানান, ওই ছাত্রীর কথা জানতে পেরে তিনিও তাঁর বড়ি গিয়ে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্রীরা যদি এ ভাবে এগিয়ে আসে তাহলে নাবালিকা বিবাহ বন্ধ করতে অতি দ্রুত সাফল্য আসবে।
দশম শ্রেণির ছাত্রী নমিতা বাড়ির কাছেই হাজরাহাট হরিশচন্দ্র হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। তার এক ছোট ভাই রয়েছে। ছোটবেলাতেই মা তাদের ছেড়ে চলে যান। বাবা খোকা বর্মন কাজের খোঁজে চলে যান নদিয়ায়। তাদের আশ্রয় হয় দাদুর বাড়িতে। বাবা মাঝে মধ্যে খোঁজ নিতে বাড়ি ফিরতেন। আবার চলে যেতেন।
গত ৫ নভেম্বর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আচমকাই বিয়ের কথা শোনে নমিতা। তার কথায়, “স্কুল থেকে ফিরে দেখি বাড়ি ভর্তি লোক। সবাই আমার বিয়ের কথা বলছে। একদিনের মধ্যেই বিয়ে। আমার কান্না পায়। বার বার বিয়ে না করার কথা জানাই। কেউ কথা শোনেনি।” বাড়ি থেকে পালিয়ে সে উপস্থিত ঘোকসাডাঙা থানায়। বাড়ি গিয়ে পুলিশ সবাইকে বুঝিয়ে রুখে দেয় বিয়ে। নমিতা বলে, “আমি পড়াশোনা করতে চাই। বিয়ে নয়।” তার বাবা বলেন, “আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছিল। এখন মেয়েকে পড়াব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy