মৃত অনির্বাণ ঘোষ।
বাইপাস সার্জারি হয়েছিল বছর খানেক আগেই। বাজি নিয়ে বরাবর সতর্কই থাকতেন তিনি। কিন্তু বুধবার রাতে দীপাবলির আনন্দে মাততে গিয়ে শখ করে একটি বাজি ফাটাতে গিয়েছিলেন নিজের দোকানের সামনেই। সেখানেই জখম হয়ে অবশেষে মারা গেলেন এক যুবক। ওই যুবকের নাম অনির্বাণ ঘোষ (৩৬)। বাড়ি কোতোয়ালি থানার গুড়িয়াহাটি এলাকার মদনমোহন পল্লিতে। তিনি পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী।
অনির্বাণের দোকান জেলা শহরের সুনীতি রোডে। দোকানের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। বাজির আঘাতে তাঁর মাথায় একটি ক্ষত হয়। সেখান থেকে রক্তপাত হয়। অনির্বাণবাবুকে প্রথমে কোচবিহার এমজেএন হাসপাতাল এবং পরে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এ দিন সকালে ওই বাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “বাজির আঘাত লেগে মৃত্যুর ঘটনার কথা কল্পনা করতে পারি না। এমন একজন যুবক ছেলের এ ভাবে মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি শোকাহত। তাঁর স্ত্রী-কন্যা, মা রয়েছেন। তাঁদের পাশে থাকব।” সেই সঙ্গে তিনি আগামীতে বাজি নিয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “বাজিতে খানিকটা জখম হয়েছিলেন ওই যুবক। পরে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।”
এলাকায় ‘ভাল ছেলে’ হিসেবে নাম রয়েছে অনির্বাণবাবুর। এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ভিড় করেছেন প্রতিবেশী, আত্মীয়রা। সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁর কাকা গৌতম ঘোষ জানান, তাঁদের পারিবারিক ওষুধের ব্যবসা রয়েছে। সেই দোকান চালাতেন অনির্বাণবাবু। অন্য দিনের মতো ওই দিনও দোকান খুলেছিলেন তিনি। সন্ধেবেলা তাঁর মামাতো ভাই দেবজ্যোতি পালকেও দোকানে ডেকে নেন তিনি। সাড়ে ৭টা নাগাদ দোকান বন্ধ করবেন বলেও ঠিক করেছিলেন। সেই সময়ই উৎসাহের বশে দোকানের সামনে বাজি ফাটাতে যান। দেবজ্যোতিবাবু জানান, ‘হেলিকপ্টার’ নামের দুটি আতসবাজি তাঁর হাতে ছিল। একটিতে আগুন দেওয়ার পরেও সেটি জ্বলেনি। সেই সময় আর একটি বাজি পাশেই বসিয়ে আগুন দিচ্ছিলেন অনির্বাণবাবু। ঠিক ওই মুহূর্তে আগের বাজিটি ফেটে তাঁর কপালে লেগে যায়। সেখান থেকে রক্তপাত হতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
দেবজ্যোতিবাবু বলেন, “হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওষুধপত্র দিয়ে দেন জরুরি বিভাগে থাকা চিকিৎসক। তিনি ক্ষত স্থানে সেলাই করার কথা বললেও তা করা হয়নি। তার মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। খুব স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে সেখান থেকে সবাই দোকানে ফিরি।” তিনি জানান, দোকানে ফেরার কুড়ি মিনিটের মাথায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন অনির্বাণবাবু। তখন তাঁর শরীর কাঁপছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টা নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর শ্বশুর উজ্জ্বল সেন বলেন, “ওঁর মতো ভাল ছেলে খুঁজে পাওয়া ভার। শুধু জামাই না, আমার নিজের ছেলের মতো ছিল। এক বছর আগেই ওর বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। তারপরে ভাল ছিল। এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy