তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ঘোষণা করল বামফ্রন্ট। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার ওই বিধিভঙ্গের অভিযোগ তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পার্থবাবু শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে এমন কিছু বক্তব্য রেখেছেন, যা তিনটি সম্প্রদায়ের ভাবাবেগকে আঘাত করেছে। তিনি তাঁদের অপমান করেছেন।’’
জীবেশবাবু বলেন, ‘‘অশোকবাবুকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি কয়েকটি কথা বলেছেন, তা কুরুচিকর। একজন শিক্ষামন্ত্রী কীভাবে এসব বলেন, ভাবতে পারছি না। আমাদের মনে হয় উনি সেই সময় সুস্থ ছিলেন না। আমরা সাংবাদিক সম্মেলনের পেপার কাটিং, ভিডিও-সহ নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছি।’’ আর অশোকবাবুর কথায়, ‘‘পার্থবাবু আমার ভোটে দাঁড়ানো নিয়েও নানা কথা বলেছেন। প্রাক্তন মন্ত্রী কাউন্সিলর, মেয়র হতে চান-সহ নানা কথা। উনি ভুলে যাচ্ছেন, ওঁর দলের মালদহ, বাঁকুড়াতেও মন্ত্রীরা পুরভোটে লড়ছেন। কলকাতাতেও আগে হয়েছে। আর আমার নামে যা বলেছেন, তা বিকৃত রুচির পরিচয়।’’ তিনি জানান, উনি মন্ত্রী হিসাবে সংবিধানের শপথ নিয়েছেন। আর এসব বলার সময় তাঁর আশেপাশে কয়েকজন প্রার্থীও ছিলেন। প্রচারের ক্ষেত্রে পুরোটাই নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সামিল।
বাম নেতারা জানান, অশোকবাবু এবার শহরের হিলকার্ট রোড লাগোয়া ছয় নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন। ওয়ার্ডটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হলেও বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষের বসবাস। সেখানে গত সোমবার প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে পার্থবাবু অশোকবাবুর নামের সঙ্গে তিন সম্প্রদায়কে জড়িয়ে কটাক্ষ করেন।
পার্থবাবু ছাড়াও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সমালোচনা করেছেন অশোকবাবুরা। তাঁরা বলেন, ‘‘মন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। হারের ভয়ে আগেই নিজে রণে ভঙ্গ দিয়ে ভোটের ময়দান ছেড়েছেন। সামনে পিছনে পুলিশের পাইলট নিয়ে ঘুরেছেন। ওঁর আয়নার সামনে দাঁড়ানো দরকার।’’
যদিও বামেদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে চাননি তৃণমূল নেতারা। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমাদের দলের মহাসচিব পার্থবাবু কোনও অসংবিধানিক কথা বলেননি। ভোটের ময়দানে ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলে বাজার গরম করতে চাইছেন অশোকবাবুরা। ওঁরা চাইলে, নির্বাচন কমিশন কেন রাষ্ট্রপতি ভবন অবধিও যেতে পারেন।’’ আর তাঁর বিরুদ্ধে বামেদের কটাক্ষ প্রসঙ্গে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘অশোকবাবুর পঞ্চায়েত সদস্যও নন। তাই নিরাপত্তারক্ষী পান না। আর আমি কমিশনের নিয়ম মেনে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে যা নিরাপত্তা পাই, তাও নিইনি। আর অশোকবাবুর উচিত, আয়নার সামনে দাঁড়ানো।’’
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ গৌতমবাবু রামঘাট এলাকায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল করেন। রামঘাট শ্মশানের পাশেই একটি নির্বাচনী দফতরের উদ্বোধন করেন। তৃণমূলের ওই মিছিলের পর বিকালেই অশোকবাবুর নেতৃত্বে এলাকায় নির্বাচনী সভা, মিছিল করেন বামেরা। একইদিনে মিছিল পাল্টা মিছিলে সরগরম হয়ে ওঠে এলাকা। যদিও কোনও গোলমালের ঘটনা ঘটেনি।
বামেদের তরফে এদিন জানানো হয়েছে, পার্টি কংগ্রেস নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এবার পুরভোটের প্রচারে শিলিগুড়িতে প্রচারে আসছেন না বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্যামল চক্রবর্তীর মত নেতারা। আর শারীরিক অসুস্থতার জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কলকাতার বাইরে যান না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশবাবু জানান, সূর্যবাবু এক দফায় এসেছেন। এর পরে মহম্মদ সেলিম, মানব মুখোপাধ্যায়, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বামফ্রন্টের একাধিক নেতা প্রচারে আসবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy