Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

হাতি ঠেকাতে ব্লেড কাঁটাতারে বিতর্ক

ব্লেডের মতো ধারালো কাঁটাতার দিয়ে চা বাগানগুলোতে একের পর-এক সীমানায় বেড়া দেওয়া হচ্ছে। পরিণামে মারাত্মক ভাবে জখম হচ্ছে বুনোরা। জঙ্গলঘেঁষা চা বাগানে এই কাঁটাতারকে ঘিরেই এখন এক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

গতিরোধ: এমন কাঁটাতারের বেড়া নিয়েই বিতর্ক। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

গতিরোধ: এমন কাঁটাতারের বেড়া নিয়েই বিতর্ক। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০৭:০৪
Share: Save:

ব্লেডের মতো ধারালো কাঁটাতার দিয়ে চা বাগানগুলোতে একের পর-এক সীমানায় বেড়া দেওয়া হচ্ছে। পরিণামে মারাত্মক ভাবে জখম হচ্ছে বুনোরা। জঙ্গলঘেঁষা চা বাগানে এই কাঁটাতারকে ঘিরেই এখন এক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি, গরুমারা জাতীয় উদ্যানের মূল প্রবেশদ্বারের উল্টো দিকে বড়দিঘি বিটের দফতরে যাওয়ার পথে জঙ্গলঘেঁষে ব্লেড কাঁটাতার লাগিয়ে দিয়েছে বড়দিঘি চা বাগান কর্তৃপক্ষ। গরুমারার জঙ্গল থেকে ১০ ফুটের কাঁচাপথের অন্য প্রান্তে এই রকম ধারালো তার লাগানো। এটা যে বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি করবে, তা নিয়ে সংশয়হীন বন ও পরিবেশকর্মী উভয়েই।

গরুমারার একেবারে পাশে থাকা বড়দিঘি চা বাগানে হাতি, বাইসনের মতো বন্য প্রাণীর হানা লেগেই থাকে। চা গাছের ক্ষতির পাশাপাশি শ্রমিক মহল্লাও এই বুনোদের হামলার শিকার হয়। তবুও বুনোদের ঠেকাতে এই ধরনের ব্লেড কাঁটাতার ব্যবহার করা যায় কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

মালবাজার, মেটেলি, নাগরাকাটা, বানারহাট সর্বত্র সীমানাবিহীন এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলছে বিভিন্ন চা বাগান। ডামডিম এবং ওদলাবাড়ির মাঝে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নতুন করে খুঁটি পুঁতে কাঁটাতার লাগিয়ে ফেলেছে রানিচেরা চা বাগান। অথচ এই এলাকাটি সরকার স্বীকৃত হাতি করিডোরগুলোর একটি। গরুমারা থেকে কাঠামবাড়ি হয়ে মহানন্দা, আবার মিনগ্লাস হয়ে ভুট্টাবাড়ির জঙ্গল সর্বত্রই গত দু’বছরে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে এই কাঁটাতার সমস্যা।

বুনোদের চলাচলের পথে এ ভাবে বাধার সৃষ্টি, আসলে মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাতের নতুন নিদর্শন। এমটাই মনে করছেন করিডোর রক্ষার কাজে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞরা। মানুষের দখলে থাকা এলাকাগুলো দিয়ে হাতি বাইসনেরা এমনিতেই দ্রুত পেরিয়ে যেতে চায়। এই কাঁটাতাঁরে পা বা শরীরের অন্য অংশ আটকে গেলে, তখন প্রবল শক্তিতে নিজেদের ছাড়াবার চেষ্টা করে তারা। এর ফলে ধারালো কাঁটাতারে ফালা ফালা হয়ে যায় বুনোরা।

গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, “আমরা এই কাঁটাতারের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগে আছি, দ্রুতই চা বাগান মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে কাঁটাতার সরাতে আর্জি জানাব।”

পরিবেশপ্রেমী সংস্থা স্পোর এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গ জুড়ে হাতি করিডর সমীক্ষার কাজ করছে। এই সংস্থার সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে বলেন, “হাতিদের চলার পথে কাঁটাতার থাকা মানে, মানুষেরই ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। ধারালো ব্লেড, কাঁটাতারে হাতি জখম হয়ে পড়লে, তখন ক্ষিপ্ত হাতির দল ধংসাত্মক আচরণও করতে পারে।”

চা বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অব ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সুমন্ত গুহঠাকুরতা বলেন, “আমরা হাতির হানায় জেরবার হয়ে যাচ্ছি, কাঁটাতার দিয়ে হাতির দলকে দূরে রাখার চেষ্টাও তা ব্যর্থ হচ্ছে। এই কাঁটাতারে সমস্যা থাকলে, বনদফতরই বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করুক যাতে, ঘন ঘন হাতির চা বাগানে, লোকালয়ে ঢোকা অন্তত কমে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant North Bengal Fencing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE