দখলমুক্ত: ফুলবাড়ির কাছে শিলিগুড়ি পুরসভার জমি দখলমুক্ত করছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে ফুলবাড়িতে পুরসভার সরকারি জল প্রকল্প রয়েছে। তা ঘিরে রাখা হয়েছিল। রাতারাতি সেই ঘেরা সরিয়ে প্রায় ১০ বিঘা জমি প্লট করে বিক্রি শুরু হয়ে যায়। কেউ বাঁশ দিয়ে, কেউ পিলার তুলে সীমানা দেওয়াও শুরু করে দেন। তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই হইচই পড়ে যায়। কারণ, ওই এলাকায় পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভার মধ্যে পড়ে। সূত্রের খবর, সব শুনে মন্ত্রী লোক পাঠিয়ে এলাকার কয়েক জনকে ধমক দিলে দু’দিন লেনদেন বন্ধ থাকে। পরে ফের তা শুরু হয়। ইতিমধ্যে পুরসভার পক্ষ থেকে পুলিশকে লিখিত ভাবে জানানো হয়। নেতা-ভূমি দফতর-পুলিশের যোগসাজশের অভিযোগ করা হয়। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে সব সীমানার বাঁশ, খুঁটি উপড়ে ফেলা হয়েছে। ফুলবাড়ি এলাকার দু’জন তৃণমূল নেতা, ভূমি দফতরের দুই কর্মী ও এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ওই ঘটনার জেরে তদন্তও শুরু হয়েছে।
শহর লাগোয়া এলাকায় এমন জমি দখলের অভিযোগ ফি মাসে অন্তত ১০টি করে উঠছে। কারণ, শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে সরকারি জায়গা কোথাও ফাঁকা নেই। যা আছে সবটাই লাগোয়া এনজেপি, ফুলবাড়ি, আশিঘর, ডাবগ্রাম, কাওয়াখালি, চম্পাসারি, মাটিগাড়া এলাকায়। চম্পাসারির কাছে গুলমায় নদীর চর প্লট করে বিক্রির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে এখনও। চরের জমিতে গড়ে উঠেছে কলোনি। বেসরকারি স্কুলও।
সরকারি সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগেই আশিঘর ফাঁড়ির এক পুলিশকর্মীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভুয়ো নথি বানিয়ে দেওয়ায় মদতের অভিযোগে জলপাইগুড়ির ভূমি দফতরের এক অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, পাহাড়ে সরকারি জমি একটি বেসরকারি স্কুলে ভুয়ো নথি দিয়ে হস্তান্তর করার অভিযোগে এক ভূমি অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।
মাস তিনেক আগে শিলিগুড়ির কাছেই চম্পাসারিতে প্রায় এক বিঘা সরকারি জমি দখল করে আস্ত মার্কেট কমপ্লেক্স গড়তে শুরু করেছিলেন কয়েক জন নেতা। দু’জন গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ বলে নিজেরাই পরিচয় দিয়ে থাকেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। পূর্ত দফতরের জমি। সেখানে পিলার তুলে ছাদের কিছুটা ঢালাই হয়ে যায়। দোকান বিক্রি বাবদ আগাম টাকা লেনদেনও হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি নবান্ন পর্যন্ত যায়। এর পরেই পূর্ত দফতর লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ গিয়ে নির্মাণ ভেঙে দেয়। ওই ঘটনার পরে তৃণমূলের দুই নেতা ও তিন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি উঠেছে।
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতমবাবু বলেন, ‘‘কমবেশি রোজই জমির সমস্যার কথা শুনতে হয়। সরকারি জমি দখল করে ভুয়ো নথি তৈরির অভিযোগও শুনতে হয়। কয়েক জনের নাম করেও অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশকে জানিয়েছি, কেউ আমার নাম করে ফোন করলে পাত্তা দেবেন না। মুখ্যমন্ত্রী কঠোর মনোভাব দেখানোয় আশা করি অভিযুক্তরা শোধরাবে। না হলে ভুগবে।’’ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ভরতলাল মিনাও প্রতিটি থানাকে সন্দেহভাজন জমি মাফিয়াদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় কী অভিযোগ, তা খতিয়ে দেখে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। এটাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ।’’
(কিশোর সাহা, কৌশিক চৌধুরী ও শুভঙ্কর চক্রবর্তীর প্রতিবেদন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy