দিনহাটায় বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি নেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে সামনে রেখে ভোটের মুখে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি। বুধবারের ওই ঘটনা ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত ছিল কোচবিহারের দিনহাটা এলাকা। ওই কাণ্ডে সরাসরি তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দেহ। দেহ নতুন করে ময়নাতদন্তের দাবিও তোলা হয়েছে। তবে বিজেপি-র ওই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে জোড়াফুল শিবির।
বুধবার সকালে দিনহাটার পশু হাসপাতালের বারান্দায় দেখতে পাওয়া যায় বিজেপি-র মণ্ডল সভাপতি অমিত সরকারের ঝুলন্ত দেহ। তা নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। দলীয় নেতার রহস্যমৃত্যুর বিষয়টিকে সামনে রেখে ময়দানে নামেন কোচবিহারের সাংসদ তথা দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকও। তাঁর নেতৃত্বে থানায় গিয়ে দ্রুত তদন্তের দাবি জানান বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। ফেরার পথে তৃণমূলের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে নিশীথ-অনুগামীদের বিরুদ্ধে। বাধা দিলে পুলিশের উপরেও চড়াও হন গেরুয়াশিবিরের কর্মী-সমর্থকরা। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চালায় পুলিশ। পুলিশের দিকেও পাল্টা ইট ছোড়েন বিজেপি কর্মীরা। এর পর কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। পরে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে নামানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
বিজেপি-র অভিযোগ, ওই ঘটনায় জড়িত তৃণমূল। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা মুখপাত্র দীপ্তিমান সেনগুপ্তর দাবি, ‘‘ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়েই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে।’’ বিষয়টি নিয়ে টুইটারে সরব হন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য।
বুধবার সকালে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরস্থিতি সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রণে এলেও, থমথমে গোটা এলাকা। রাতে জেলার বিজেপি সভানেত্রী মালতী রাভা রায়, সাংসদ এবং অন্যান্য নেতৃত্বকে সামনে রেখে ধিক্কার মিছিল বার করে বিজেপি। বিজেপি নেতারা জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে, অমিতের দেহের ফের ময়নাতদন্তের দাবি তোলেন। সেইসঙ্গে ময়নাতদন্ত চলাকালীন ভিডিয়ো রেকর্ডিং করার দাবিও তোলা হয়। কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের মর্গের কুলার খারাপ থাকায় অমিতের দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে আলিপুরদুয়ারে। বৃহস্পতিবার ফের তাঁর দেহ কোচবিহারে আনা হবে। ওই ঘটনাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মৌনী মিছিলের ডাক দিয়েছে বিজেপি। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
যদিও বিজেপি-র তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। যিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তুলছেন তিনি কি খুনের প্রত্যক্ষদর্শী? তা হলে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক।’’ দলীয় দফতর ভাঙচুর করার বিষয়টিকে সামনে রেখে পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে জোড়াফুল শিবিরও। দুপুরে দিনহাটা শহরে মিছিল করে দিনহাটা সদর মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে অবস্থানে বসেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ।
প্রসঙ্গত, গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই দিনহাটার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। সে সময় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার হয়েছিল দিনহাটার বিভিন্ন এলাকা। লোকসভা নির্বাচনেও এই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে পুরুলিয়ার বলরামপুর, আড়শা, নদিয়ার গয়েশপুরে, মেদিনীপুরের পিংলায়, হুগলির গোঘাটে, কোচবিহারের তুফানগঞ্জে বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই সব ঘটনাতেও অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy