ডাকাতির দল তৈরি করার উদ্দেশ্য নিয়েই পুলিশের গুলিতে নিহত সাজ্জাক আলমকে জেল থেকে বার করা হয়েছিল। এমনকি পাহারারত পুলিশকর্মীদের হাত থেকে পালানোর জন্য এক লক্ষ দশ হাজার টাকা দিয়ে বিহারের পূর্ণিয়ার এক দুষ্কৃতীর কাছ থেকে সেভেন এমএম পিস্তল কিনেছিল সাজ্জাকের সঙ্গী, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি নাগরিক আব্দুল হোসেন ওরফে আবাল। পূর্ণিয়ার ওই অস্ত্র কারবারি গ্রেফতার না হলেও পুলিশ জানতে পেরেছে, আবালকে ওই অস্ত্র কেনার টাকা দিয়েছিল উত্তর দিনাজপুরের করণদীঘির বাসিন্দা হাসিবুর রহমান। যার বিরুদ্ধে মাদকের কারবার চালানোর অভিযোগ রয়েছে। গত বছর অস্ত্র এবং মাদক মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জেলে থাকার সময়েই সাজ্জাক এবং আবালের সঙ্গে আলাপ হয় তার।
এক পুলিশকর্তা জানান, জেলে বসেই হাসিবুর ডাকাতদল বানানোর পরিকল্পনা করে। সে এবং আবাল জেল থেকে ছাড়া পেলেও সাজ্জাক জামিন পায়নি। তাই তাকে জেলের বাইরে আনার জন্য অস্ত্র কিনে পুলিশকর্মীদের জখম করে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছিল সে।
১৫ জানুয়ারি বিকেলে ইসলামপুর মহকুমা আদালত থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল খুনের মামলায় অভিযুক্ত বিচারাধীন বন্দি সাজ্জাককে। পাঞ্জিপাড়ার কাছে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য পুলিশ গাড়ি দাঁড় করায়। গাড়ি থেকে নেমে আদালত থেকে নিয়ে আসা পিস্তল বার করে পাহারারত দুই পুলিশকর্মীকে নিশানা করে গুলি চালিয়েছিল সাজ্জাক। তাতে গুরুতর জখম হন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর নীলকান্ত সরকার এবং কনস্টেবল দেবেন বৈশ্য। ওই ঘটনার তিন দিনের মাথায় বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের সামনে পড়ে যায় সাজ্জাক। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের পাল্টা গুলিতে মৃত্যু হয় সজ্জাকের। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার করে।
পুলিশের দাবি, ওই পিস্তল দিয়েই সাজ্জাক প্রিজ়ন ভ্যান থেকে পালানোর সময়ে গুলি চালিয়েছিল। সেই পিস্তলটি কেনা হয়েছিল পূর্ণিয়া থেকে। পুলিশের গুলিতে সাজ্জাকের মৃত্যুর পরে হাসিবুর ও আবালকে গ্রেফতার করা হয়। জেরার মুখে হাসিবুর অস্ত্র কেনার জন্য টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের। যার কাছ থেকে অস্ত্র কেনা হয়েছিল, সেই পূর্ণিয়ার বাসিন্দার খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তদন্তকারীরা জানান, হাসিবুরের উদ্দেশ্য ছিল ওই দু’জন ছাড়া বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের নিয়ে ডাকাত দল তৈরির। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই সাজ্জাককে জেল থেকে বার করা তার কাজ ছিল। বাকি কাদের সঙ্গে সে যোগাযোগ করেছিল, তাদের বর্তমান অবস্থা কী, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)