Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পাখি ফেরাতে শহর জুড়ে বোনা হচ্ছে ফল গাছ

শিলিগুড়ি শহরের আকাশে পাখিদের ওড়াওড়ি বড়ই কমে গিয়েছে বলে মনে করছেন শহরবাসী। হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, সেবক রোড, স্টেশন ফিডার রোডের পুরনো বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা প্রায় সকলেই এই ব্যাপারে একমত

আশা: পাখি ফেরাতে শিলিগুড়ি শহরে ফলের গাছ লাগ

আশা: পাখি ফেরাতে শিলিগুড়ি শহরে ফলের গাছ লাগ

নীতেশ বর্মন
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

শহর বেড়েছে মানুষের মর্জিতে, চাহিদায়। কাটা পড়ছে গাছ। হারিয়েছে জল, জমি, জঙ্গল। ইট, কাঠ পাথরের ইমারতে বসতি বেড়েছে ঠিকই কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে পাখিরা। উন্নয়নের মূল্য চুকিয়ে তারা কি আমাদের উপর অভিমান করে দূরে সরে যাচ্ছে?

এই প্রশ্নই এখন শহরবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ, শিলিগুড়ি শহরের আকাশে পাখিদের ওড়াওড়ি বড়ই কমে গিয়েছে বলে মনে করছেন শহরবাসী। হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, সেবক রোড, স্টেশন ফিডার রোডের পুরনো বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা প্রায় সকলেই এই ব্যাপারে একমত। শহরের রাস্তা সম্প্রসারণ, অ্যাপার্টমেন্ট, শপিং কমপ্লেক্স তৈরির জন্য শয়ে-শয়ে গাছ কাটা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও হবে। তাতেই বেঘর হয়ে শহর থেকে ক্রমশ দূরে মাটিগাড়া, ফাঁসিদেওয়া, সুকনা, শালুগাড়া, আমবাড়ির দিকে পাড়ি দিচ্ছে কাক, শালিখ, টিয়া, চড়ুই।

শহরের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের তরফে নানা সময়ে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল শিলিগুড়ির হর্টিকালচার সোসাইটির কাছে। তাই শুক্রবার সংস্থার পক্ষ থেকে বিধান রোডের দু’পাশে শতাধিক আম, কাঠাল, আঁতা, লিচুর গাছ বোনা হল। তাতে শামিল ছিলেন শিলিগুড়ির নাগরিক সমিতি, সিটিজেন্‌স ফোরাম-সহ শহরের বিশিষ্টজনদের অনেকেই।

উদ্যোক্তারা জানান, পাখিদের ফিরিয়ে আনতে ফলের গাছ দরকার। খাবারের সংস্থান না থাকলে পাখি শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্রমশ গ্রামের দিকে চলে যাবেই। তাই শহরের বুকে পাখিদের কলতান আবার ফিরিয়ে আনতে ফলের গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সোসাইটির সভাপতি নান্টু পাল জানান, শিলিগুড়ি শহরে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে তাতে দূষিত হচ্ছে শহরের পরিবেশ। গাছপালার সংখ্যাও তো কমছে। ফলের গাছ তো শহরের প্রধান রাস্তাগুলিতে এখন আর দেখাই যায় না। শুধু ইউক্যালিপটাস, দেবদারু, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছ লাগালে পাখিদের ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই ফলের গাছ লাগানোর উপরে জোর দিয়েছেন তাঁরা। নান্টুবাবু জানান, ‘‘পাঁচ দিন ধরে শিলিগুড়ির প্রধান রাস্তাগুলিতে ফলের গাছ লাগানো হবে। চারাগাছ বিলিও চলছে সাধারণ মানুষের জন্য।’’ সব মিলিয়ে দশ হাজার ফলের চারা বিলি করা হবে বলে তিনি জানান। তার মধ্যে আম, জাম, লিচু, আতা, সুপারি কী নেই!

শহরকে ঘিরে পাখিদের এমন অভিমানে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ)কো অর্ডিনেটর অনিমেষ বসুও উদ্বিগ্ন। তিনি জানান, শিলিগুড়িতে একটা সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়াপাখি উড়ে বেড়াত। কাক-শালিখ-চড়ুইয়ের ছড়াছড়ি ছিল রাস্তাঘাটে। ইদানীং তেমন চোখেই পড়ে না। অনিমেষবাবু জানালেন, ফলের গাছ বোনাটা একটা দারুণ পদক্ষেপ। সবাই এগিয়ে এসেছেন। পুরনো ইমারত ভেঙে নতুন অ্যাপার্টমেন্ট হওয়ার সঙ্গে চড়ুইয়ের মতো পাখিরাও যে বাস্তুচ্যূত হয় সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্যের বিষয়টি সব শিলিগুড়িবাসীকেও বুঝতে হবে।’’ সেই সচেতনা বাড়াতে শহরবাসীকেও এই ফলের গাছে লাগানোর উদ্যোগে শালি করা হয়ে বলে তিনি জানান।

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Ecosystem Birding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE