পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে রসিকবিল পর্যটন কেন্দ্রে ফিজেন্ট পাখি আনছে বন দফতর। দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক থেকে নজরকাড়া ওই পাখিদের আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বন দফতর সূত্রের খবর, এজন্য কেন্দ্রীয় জু অথরিটির ছাড়পত্রও মিলেছে। এ জন্য নতুন করে অত্যাধুনিক মানের পাখিরালয়ের পরিকাঠামো তৈরির জন্য ২৬ লক্ষ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই মিনি জু’র ঘড়িয়াল পার্কগামী রাস্তা লাগোয়া এলাকায় ফিজেন্টদের জন্য নতুন পাখিরালয় তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বার দুর্গাপুজোর আগেই কোচবিহারের রসিকবিল মিনি জু’তে পর্যটকেরা ওই পাখি দেখার সুযোগ পাবেন। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “রসিকবিল পর্যটন কেন্দ্রের আকর্ষণ বাড়াতে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং জু থেকে ওই বিশেষ প্রজাতির পাখিদের আনার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি প্রজাপতি উদ্যান তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।”
বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, মূলত শীতের মরসুমে পরিযায়ী পাখিদের টানেই রসিকবিলে এক সময় পর্যটকেরা ভিড় জমাতেন। রসিকবিল পর্যটন কেন্দ্রও ওই পাখি নির্ভরতাকে কেন্দ্র করে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে সেখানে চিতাবাঘ, হরিণ, ঘড়িয়াল, কচ্ছপ, ময়ূর উদ্ধার কেন্দ্র ও পার্ক তৈরি হয়। সারা বছর যাতে নির্দিষ্ট কয়েক প্রজাতির পাখি দেখার সুযোগ মেলে সে জন্যও পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। তার জালির নেটের ঘেরাটোপ দিয়ে তৈরি সেখানে কিছু পাখিও রাখা হয়। কিন্তু ফেজেন্টের মতো আকর্ষণীয় পাখি না থাকায় পর্যটকদের অনেকেই আক্ষেপ করতেন। ওই আক্ষেপ মেটাতে দার্জিলিংয়ের ওই জু অথরিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জেলার বনকর্তারা। রসিকবিল থেকে কয়েক বছর আগে ওই চিড়িয়াখানায় চিতাবাঘ পাঠানোর সূত্র ধরেই ফেজেন্ট বিনিময়ের তোড়জোড় শুরু হয়। কোচবিহারের ডিএফও কৌশিক সরকার অবশ্য বলেন, “বিনিময়ের ব্যাপার নেই। দার্জিলিংয়ের চিড়িয়াখানায় প্রচুর সংখ্যক ফেজেন্ট পাখি রয়েছে। সেগুলির থেকে কয়েকটি ফেজেন্ট রসিকবিলে আনা হচ্ছে। ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করে পরিকাঠামো তৈরির কাজ হচ্ছে। আশা করছি, দুর্গাপুজোর আগে পাখিরালয়টি চালু করা যাবে।”
ওই পাখিরালয়ের পরিকাঠামো কেমন হবে? ওই পাখিরাই বা কেমন দেখতে? বন দফতর ও পরিবেশপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, পাকা ঘরের আদলেই মোট চারটি এনক্লোজারে ওই পাখিরালয় তৈরি হবে। সামনের দিকে থাকবে পুরোপুরি তারজালির নেটের ঘেরাটোপ। সহজেই পর্যটকেরা ওই পাখিদের সৌন্দর্য থেকে হুটোপুটি দেখার সুযোগ পাবেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রতিটি এনক্লোজারে অন্তত তিনটি করে ফেজেন্ট পাখি রাখা হবে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপত্র অনিমেষ বসু বলেন, “ফেজেন্ট অত্যন্ত সুন্দর পাখি। আকারে খানিকটা ময়ূরের মতো। হিমালয় সংলগ্ন বিভিন্ন জঙ্গলে সাধারণত ওই পাখিদের পাওয়া যায়। হিউম, রেড, ব্ল্যাক নানা রঙ ও প্রজাতিও রয়েছে। সেগুলি রসিকবিলে আনা হলে পর্যটকদের আকর্ষণ খানিকটা বাড়বে।” অন্য পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের কর্তা অরূপ গুহ বলেন, “ ফেজেন্ট পাখি রঙিন, চনমনে। রসিকবিলকে তা বাড়তি মাত্রা দেবে।” পাখিরালয় তৈরির তোড়জোড়ের মধ্যেও পর্যর্টকরা অবশ্য গোটা মিনি জু চত্বর চোরকাঁটায় ভরে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ। তাঁদের অনেকেই বলেন, চোরকাঁটা সাফাই করা নিয়ে বন দফতরের হেলদোল নেই। হরিণ উদ্যান থেকে চিতাবাঘ উদ্ধার কেন্দ্র লাগোয়া এলাকা চোরকাঁটার জন্য ঘুরে দেখাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোচবিহারের ডিএফও অবশ্য বলেছেন, বর্ষার সময় ওই সমস্যা হয়। সেসব কেটে সাফাই করার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy