উত্তরকন্যায় তিন মন্ত্রী। রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দু’পাশে বাচ্চু হাঁসদা (বাঁ দিকে) ও জেমস কুজুর (ডান দিকে)। —বিশ্বরূপ বসাক
জমি আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই প্রথম থেকেই জোর করে চাষের জমি দখল না করার নীতি নিয়েছে তাঁর সরকার। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে এসে জমির গুরুত্ব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মঙ্গলবার তিনি কলকাতায় শিল্পমহলকে আরও এক বার আশ্বস্ত করতে চেয়ে বলেছেন, শিল্প করতে জমি কোনও সমস্যা হবে না। এক দিন পরে সেই জমি প্রসঙ্গ উঠে এল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর কথাতেও। সাত জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ঝুলে থাকা ১৫টি প্রকল্প এ বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এর জন্য জমি নিয়ে যে জট, তাও দ্রুত খুলতে হবে। আর নতুন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন জমিদাতাদের পাকা রাজিনামা।
এ দিন রবিবাবুর কথায় বারে বারেই এসেছে জমি প্রসঙ্গ। বিকেলে উত্তরকন্যায় সিআইআইয়ের প্রতিনিধিদের শিল্পায়নে উৎসাহিত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘উত্তরে শীতলপাটি থেকে আনারস, ফুল, আদা, টমেটো, কমলালেবু, চা— কী নেই! শিল্পোদ্যোগীদের এগিয়ে আসতে হবে।’’ তার পরেই যোগ করেন, ‘‘বহু উদ্যোগী দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে ফেলে রেখেছেন, কিছুই করছেন না। এ বার তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। আমরা তাঁদের বলছি, জমি ফেলে না রেখে শিল্প করুন। না হলে আমাদের এ বার আমাদের অন্য কিছু ভাবতে হবে।’’
সকালে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। সেখানে ১৫টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। প্রকল্পগুলি জমি জটে আটকে রয়েছে। সেগুলি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন মন্ত্রী। সাত জেলার পূর্ত, জনস্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, বন-সহ একাধিক দফতরের প্রতিনিধি এই বৈঠকে হাজির ছিলেন। মোট ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প এখন আটকে রয়েছে জমির জন্য। এই প্রকল্পগুলি নিয়ে আধিকারিক ও বাস্তুকারদের নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন মন্ত্রী। বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পগুলি শেষ করতে হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন জেলায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। কিছু প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। কিন্তু জমিদাতাদের আপত্তি, জমির বেশি দাম, অ্যাপ্রোচ রোডের সমস্যা-সহ নানা আইনি জটিলতায় ১৫টি প্রকল্প আটকে রয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু মন্ত্রী হয়ে উত্তরকন্যায় এসে সমস্ত প্রকল্প খতিয়ে দেখার পরেই ওই প্রকল্পগুলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জটিলতা কাটিয়ে যাতে দ্রুত কাজগুলি শেষ করা যায়, সেই দিকে নজর দেওয়ার জন্য অফিসারদের নির্দেশ দেন। এ দিনের বৈঠকে নদীভাঙন, সেতু, রাস্তা এবং পানীয় জল প্রকল্পের উপর জোর দিতে বলা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘আটকে থাকা প্রকল্পগুলি দ্রুত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে অফিসারদের। এ বছরের মধ্যে কাজগুলি শেষ করতে হবে। আমরা প্রশাসনিক আধিকারিকের প্রকল্পের তালিকা তৈরি করে জমা দিতে বলেছি। কিন্তু সেখানে জমিদাতাদের রাজিনামা বা জমিটি কোন সরকারি দফতরের অধীনে রয়েছে বা জমি নিয়ে কোনও সমস্যা আছে কি না, তার রিপোর্টও দিতে হবে।’’
এর পরে ওঠে নতুন প্রকল্পের প্রসঙ্গ। এ ক্ষেত্রে জমিদাতাদের পাকা রাজিনামা-ও এক রকম বাধ্যতামূলক করলেন তিনি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন প্রকল্পের কাজের তালিকা তৈরি করে ২০ জুনের মধ্যে জেলাশাসকদের জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ রকম কোনও প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কোনও বিষয় থাকলে, রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় জমিদাতাদের অনুমতিপত্র বা রাজিনামাও জমা দিতে হবে বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন নতুন মন্ত্রী। সেই অনুসারে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জেলা ধরে ধরে কাজ শুরু হবে।
কেন্দ্রের জমি আইন আটকে থাকায় এখন জমি কিনে কাজ চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। গত দু’বছরে তারা এই ভাবে বহু সরকারি প্রকল্পের জমি জোগাড় করেছে। এ ক্ষেত্রেও তেমনই কিছু করা হবে কি না, তা এ দিন স্পষ্ট করে জানা যায়নি। তবে অতীত ঘটনাবলী থেকে অভিজ্ঞতা লাভ করে এখন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পরে জমির জন্য যাতে কোনও ভাবে আটকে না যায়, সে দিকে এখন থেকেই নজর রাখতে চাইছেন মন্ত্রী। তাই এই নির্দেশ।
এ দিনের বৈঠকে বালুরঘাটের নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রের পরিকাঠামো চূড়ান্ত করার জন্য আধিকারিকদের দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় পাঠানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেই সঙ্গে শিলিগুড়িতে ফুলবাজার, আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে বাটার-ফ্লাই পার্ক, রবীন্দ্রভবন, স্কার করা, একাধিক নদী বাঁধ সংস্কার, বাজার, সেতু তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy