Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূল নেতাকে কুপিয়ে খুন, অভিযুক্ত সিপিএম

বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একাধিক মামলায় অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতাকে কুপিয়ে খুন করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে। সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ইটাহার থানার কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামালপুর উত্তরপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ওয়াজেদ আলি (৪২)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১০
Share: Save:

বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একাধিক মামলায় অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতাকে কুপিয়ে খুন করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে। সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ইটাহার থানার কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামালপুর উত্তরপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ওয়াজেদ আলি (৪২)।

এদিন বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে মহানন্দা নদীর ধারের রাস্তায় তাঁকে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তাঁর মাথায়, বুকে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ খবর পেয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। ওই ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী কদবানু বিবি প্রতিবেশী পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। নিহতের পরিবারের লোকজনের দাবিস, অভিযুক্তরা সকলেই সিপিএমের কর্মী সমর্থক বলে পরিচিত।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে চাপানউতর ও উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় এলাকায় বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, ওয়াজেদবাবুর প্রভাবে কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল শক্তিশালী হয়েছে। সেখানে সিপিএম ঘুরে দাঁড়াতে পারছিল না। সেই কারণেই, এদিন তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। যদিও সিপিএমের তরফে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সমাজবিরোধী কার্যকলাপ নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওয়াজেদবাবুকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, নিহতের বিরুদ্ধে ইটাহার ও মালদহের চাঁচল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কী কারণে দুষ্কৃতীরা তাকে খুন করল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে অভিযুক্তদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, গত প্রায় এক দশক ধরে পেশায় চাষি ওয়াজেদবাবুর বিরুদ্ধে চাঁচল ও ইটাহার থানায় অপহরণ, খুন, ডাকাতি, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে ইটাহারের চূড়ামণ এলাকায় একটি ডাকাতির ঘটনায় পিছনে নিহতের যোগ ছিল বলে পুলিশের দাবি। বাম আমলে ওয়াজেদবাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তৃণমূল জমানায় তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই সমাজবিরোধীদের সঙ্গে পুরনো কোনও শত্রুতা বা লুঠের টাকা পয়সা ও সামগ্রীর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গোলমালের কারণে তাঁকে খুন করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেই সঙ্গে, ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ রয়েছে কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ওয়াজেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিল না।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বামফ্রন্ট আমলে ওয়াজেদবাবু সিপিএম কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি কিছু দিনের জন্য কংগ্রেসে যোগ দিলেও রাজ্যে পালাবদলের পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সেই থেকে ওয়াজেদবাবু এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওয়াজেদবাবুর স্ত্রী কদবানু বিবি তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামালপুর সংসদ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী গুলেনুর বিবির সঙ্গে তাঁর প্রাপ্ত ভোট সমান হয়ে যাওয়ায় কদবানু টসে পরাজিত হন।

পুলিশ জানিয়েছে, এদিন সকালে ওয়াজেদবাবু স্থানীয় রাধানগর বাজার থেকে বাড়ি তৈরির লোহার রড কিনে তাঁর খুড়তুতো ভাই খালেকুল ইসলামের সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। খালেকুলবাবু বাইকটি চালাচ্ছিলেন! সেই সময় জামালপুর উত্তরপাড়া এলাকায় একদল দুষ্কৃতী রাস্তা আটকে তাঁদের বাইকটিকে আটকানোর চেষ্টা করে। বেগতিক বুঝে খালেকুলবাবু বাইকটির গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীরা চলন্ত অবস্থায় ওয়াজেদবাবুর মাথার পিছনে শাবল দিয়ে আঘাত করলে বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। প্রাণে বাঁচতে খালেকুলবাবু বাইক ফেলে পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে লক্ষ করে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি পালাতে সক্ষম হন। এরপর দুষ্কৃতীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়া ওয়াজেদকে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, ওয়াজেদবাবুর স্ত্রী ছাড়াও দশম ও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া আসলাম হক ও কবিরুল হক নামে দুই ছেলে রয়েছে।

নিহতের ভাই আজিম হোসেন বলেন, ‘‘রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে কোনও পদে না থেকেও দাদা কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের নেতৃত্ব দিতেন। দাদার অধীনে তৃণমূলের কয়েকশো কর্মী ছিলেন। সেই কারণে, সিপিএম পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে দাঁড়াতে না পেরে এদিন পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতীদের দিয়ে দাদাকে খুন করাল।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক অমল আচার্যের দাবি, ‘‘বাম আমলে সিপিএমের নির্দেশে ওয়াজেদবাবু বিভিন্ন সমাজবিরোধী কার্যকলাপ চালালেও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে তিনি দলের নির্দেশে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে গিয়েছিলেন। তৃণমূলের হাত থেকে কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিতে ও ওই এলাকায় তৃণমূলের সংগঠনকে ভেঙে দিতেই এদিন সিপিএমের দুষ্কৃতীরা পূর্ব পরিকল্পনা করে ওয়াজেদবাবুকে খুন করেন।’’

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, ‘‘রাজ্যে পালাবদলের পর ব্যক্তিগত স্বার্থে অনেকেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে ওয়াজেদবাবু সিপিএমের সঙ্গে কোনওদিন ছিলেন বলে আমার জানা নেই।’’ তাঁর দাবি, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সিপিএমের কর্মী সমর্থকেরা গুটিয়ে থাকেন। তৃণমূলের দুই দল দুষ্কৃতীদের মধ্যে টাকা পয়সা বা লুঠের মালের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গোলমালের জেরেই ওয়াজেদবাবুকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমের কোনও যোগ নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE