২০২১ সালে ধূপগুড়িতে নিহত সিআরপিএফ জওয়ান জগন্নাথ রায়ের স্ত্রীয়ের সঙ্গে এক মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
কাশ্মীরে জঙ্গিহানায় নিহত জওয়ানের স্ত্রীকে ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে প্রার্থী করে দলের অন্দরেই ‘দ্বন্দ্বে’ জড়াল বিজেপি। মঙ্গলবার, স্বাধীনতা দিবসের রাতে বিজেপি তাপসী রায়কে ধূপগুড়ি বিধানসভায় উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে তাপসীর স্বামী, সিআরপির ৭৩ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত জগন্নাথ রায়ের মৃত্যু হয়। তখন রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আবহ চলছিল। সে ঘটনার মাসখানেক পরে, ধূপগুড়িতে ভোট প্রচারে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত জওয়ানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায় কোলে সন্তান নিয়ে তৃণমূলের সভা মঞ্চে উঠে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সভায় বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ভোটের পরে, ওই পরিবারকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই তাপসী রায়কে ভোটে প্রার্থী করে চমক দিতে চেষ্টা করল বিজেপি। যদিও প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে ‘অস্বস্তি’। কেন সংগঠনের কাউকে প্রার্থী করা হল না তা নিয়ে সমাজ মাধ্যমে বিজেপি সভাপতিকে বিঁধে শুরু হয়েছে লেখালেখি।
বুধবার বিজেপি অফিসে বসে তাপসী জানান, ২০২১ সালের মার্চ মাসে পুলওয়ামায় তাঁর স্বামী মারা গিয়েছিলেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, স্বামীর মৃত্যুর জায়গা হিসেবে ভুলবশত তাপসী পুলওয়ামার উল্লেখ্য করেছেন। পুলওয়ামা কাণ্ড ঘটেছিল ২০১৯ সালে। ২০২১ সালের মার্চে শ্রীনগর-বারামুলা রোডে টহলদারির সময়ে তাপসীর স্বামীদের গাড়িতে জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। একাধিক জওয়ানের মৃত্যু হয় সেই ঘটনায়। এ দিন তাপসী বলেন, “আমার স্বামীও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, আমিও দেশের কাজ করতে চাই।”
সূত্রের দাবি, নিহত জওয়ানের পরিবারেরের উপরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আগে থেকেই নজরে রাখছিলেন। উপনির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর নামের প্রস্তাব জেলা থেকে পাঠানো হয়েছিল। বিজেপি নেতৃত্ব তাপসী রায়ের বিস্তারিত তথ্য জেলাকে পাঠাতে বলেন। সূত্রের দাবি, দলের উঁচু তলা তাপসীর নামে সিলমোহর দেয়।
তবে তাপসীর নাম ঘোষণার পর থেকে সমাজ মাধ্যমে কটাক্ষ করেছেন বিজেপিরই একাংশ। কেউ দাবি করেছেন, বিজেপির জেলা সভাপতি ‘টাকা’ খেয়ে প্রার্থী ঠিক করেছেন, কারও হতাশা, তৃণমূলকে ধূপগুড়ির আসন ‘উপহার’ দিলেন বিজেপি জেলা সভাপতি। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “অনেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, তাঁরাই ক্ষোভে নানা কথা বলছেন। গত বিধানসভা ভোটে বিষ্ণুপদ রায় প্রার্থী হওয়ার পরেও, অনেকে দাবি করেছিলেন তিনি হারবেন। প্রার্থী তো রাজ্য-কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করে।”
এ দিন তৃণমূলের প্রার্থীর মনোনয়ন পেশের সময় উপস্থিত শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, “সব সৈনিকদের আমরা সম্মান করি। দেশরক্ষায় যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁরা প্রণম্য। কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কেউ যদি নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের আবেগ উস্কে দিতে চান, তা হলে পরে তাঁদের প্রায়শ্চিত্ত করতে জনগণ বাধ্য করাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy