রাস্তায় ক্যামেরা। — নিজস্ব চিত্র
রবিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির সেবক রোডে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় সূত্র বের করতে সামনের একটি রেস্তোরাঁর ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তার পরেও ওই ফুটেজ থেকে কোনও রকম সূত্র পাওয়া যায়নি এলাকা অন্ধকার থাকায় ও ক্যামেরার ক্ষমতা অত্যন্ত কম থাকায়। ফুটেজে যাঁদের ছবি দেখা যাচ্ছে তাঁদের কাউকেই চেনা যাচ্ছে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশকে তদন্তের জন্য অন্য সূত্রগুলি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে। পুলিশের কিছু কর্তার আক্ষেপ, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ) থেকে যে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা রাস্তায় লাগানোর কথা ছিল তা যদি এ দিন থাকত, তাহলে হয়ত ঘটনার পরেই সহজে খুনিকে ধরা সম্ভব হত। ভোটের মরসুমে এই প্রসঙ্গ তুলে ফের রাজ্য সরকারকেই আরও একবার দুষেছেন শিলিগুড়ির মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী ও প্রাক্তন এসজেডিএ চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য বিশদে খোঁজখবর নিয়ে মন্তব্য করবেন বলে জানিয়েছেন।
অশোকবাবুর অভিযোগ, এসজেডিএ এই বিষয়ে উদ্যোগী হলেও শাসক দলের লোভের কাছে নতি স্বীকার করে এই ক্যামেরাগুলি লাগানো যায়নি। সেই সময় যদি সঠিক দামে সঠিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা লাগানো হত, তাহলে শহরে এদিনের খুনের ঘটনা তো বটেই অনেক অপরাধ কমে যেতে পারত। এমনকী বেআইনি পার্কিংও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। তিনি বলেন, ‘‘যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা ভাল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা যে হয়নি তা এখন সকলেই জানে। এমনকী যাঁরা অপরাধ করল তারাও এখন মুক্ত। এই সরকারের সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল।’’ তবে পুরসভার পক্ষ থেকে তাঁদের ইচ্ছে থাকলেও তহবিল কম থাকায় এ ধরণের উদ্যোগ নেওয়া যায় না। রাজ্য সরকারি কোনও দফতর বা সংস্থার তহবিল থেকে এগুলি করারই নিয়ম বলে তাঁর দাবি। ভবিষ্যতে ক্যামেরা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা যেতেই পারে বলে তিনি জানান। তবে নির্বাচনী বিধি নিষেধ এখনও লাগু থাকায় এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। এ বিষয়ে বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আপনারা যা খুশি লিখুন।’’ মূলত ফের পুরনো অস্বস্তি ঢাকতেই তিনি মন্তব্য এড়িয়েছেন বলে বিরোধীদের দাবি।
বস্তুত, গত ২০১৩ সালের গোড়ায় এসজেডিএর পক্ষ থেকে শহরের নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে ক্লোজড্ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কথা ছিল। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় ৮০টি ক্যামেরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানোর কথা ছিল। তাঁর জন্য প্রায় আট কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল বলে এসজেডিএ সূত্রেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্ত ক্যামেরাগুলি বসানো হয়নি। ৫০টির মত ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। অথচ বরাদ্দ টাকা খরচের হিসেব জমা পড়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তার খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায় যে ক্যামেরা বসানো হয়েছে, আর যে ক্যামেরা বসানোর কথা ছিল তার মানে আকাশ-পাতাল তফাত রয়েছে। বসানো ক্যামেরাগুলি সমস্ত অত্যন্ত নিম্নমানের বলে জানা যায়। খবর জানাজানি হতেই তৎকালীন এসজেডিএর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী এসজেডিএর অন্য মামলার সঙ্গে এই মামলাটিতেও তদন্তের অনুরোধ জানান পুলিশকে বলে জানা যায়। তদন্তে নেমে ওই ক্যামেরাগুলি বসানোর দায়িত্বে ছিল যে ঠিকাদার সংস্থা, তাঁর কর্ণধার সুব্রত দত্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বেশ কিছুদিন জেল খাটার পর তিনি আপাতত জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy