Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পানের দোকানেও ঘোষণা নগদে নয়, মোবাইলে দিন

এত দিন দোকানের দেওয়ালে সাঁটা সাদা কাগজে পেন দিয়ে লেখা ছিল, ‘আজ নগদ, কাল বাকি।’ সে কাগজ চাপা পড়েছে ঝকঝকে নতুন বোর্ডে, তাতে লেখা এখানে পেটিএম-এ টাকা নেওয়া হয়। তাতেই লেনদেনের বহর বদলে গিয়েছে বলে দাবি রানা দত্তের। জলপাইগুড়ির বাবুপাড়ায় রাহুত ভবনের বিপরীতে ফুটপাতে ছোট্ট গুমটি ঘরে পানের দোকান চালান বছর ত্রিশের রাণা।

অ্যাপে টাকা দিন। জলপাইগুড়ির পান দোকানে। —নিজস্ব চিত্র

অ্যাপে টাকা দিন। জলপাইগুড়ির পান দোকানে। —নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৭
Share: Save:

এত দিন দোকানের দেওয়ালে সাঁটা সাদা কাগজে পেন দিয়ে লেখা ছিল, ‘আজ নগদ, কাল বাকি।’ সে কাগজ চাপা পড়েছে ঝকঝকে নতুন বোর্ডে, তাতে লেখা এখানে পেটিএম-এ টাকা নেওয়া হয়।

তাতেই লেনদেনের বহর বদলে গিয়েছে বলে দাবি রানা দত্তের। জলপাইগুড়ির বাবুপাড়ায় রাহুত ভবনের বিপরীতে ফুটপাতে ছোট্ট গুমটি ঘরে পানের দোকান চালান বছর ত্রিশের রাণা। নর্দমার পাশে চাকা লাগানো গুমটি ঘরে কোনও মতে এক জনের বসার জায়গা হয়। ছোট্ট দোকানে আধুনিক প্রযুক্তিতে লেনদেনের বোর্ড দেখে প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী বাপ্পা চৌধুরীও। দুপুরে, সন্ধ্যায় এবং রাতে পান বাবদ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা মেটাতে হয় বাপ্পাকে। পুরোনো পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পরে রানাবাবুর মতো বিপাকে পড়েছিলেন বাপ্পাও। ব্যাঙ্ক-এটিএম থেকে প্রয়োজনীয় টাকা মিলছে না, তার উপরে প্রতি দিন খুচরো ৪০ টাকা দেওয়া নেওয়া দুই সমস্যা। শেষে রানাবাবুর অনুরোধেই মোবাইলে পেটিএম অ্যাপ ভরে নিয়েছেন বাপ্পা। দিনের শেষে বিল ৩৫ টাকা হোক বা ৪২ টাকা মোবাইল বের করে মিটিয়ে দিচ্ছেন।

শুধু রানা-বাপ্পাই নন, নোট বাতিলের ঘোষণার ধাক্কায় বিকল্প লেনদেনে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হচ্ছেন অনেকেই। জলপাইগুড়ির কদমতলার একটি বহুজাতিক বিপণির বিক্রয় কর্মী পারমিতা পাল বলেন, ‘‘সে দিন তো এক বয়স্ক মহিলাও এটিএম কার্ড দিয়ে বিল মেটালেন। অনেকে এসে পেটিএম আছে কি না, খোঁজ করছেন।’’

নোট বাতিলের ঘোষণার পরে এক মাস ঘুরছে এ দিন বৃহস্পতিবার। ব্যাঙ্ক-এটিএম থেকে টাকা তোলার বিধিনিষেধ এখনও রয়েছে। পেটিএম অথবা ওয়ালেট সার্ভিসের বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপলিকেশনে লেনদেনে কিন্তু কোনও বিধি নিষেধ নেই। ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ডের নম্বর, পিন ব্যবহার করে যত ইচ্ছে টাকা পেটিএম সহ ওয়ালেট সার্ভিস অ্যাপে জমা রাখা যায়। ইচ্ছে মতো সেই টাকা অন্য কারও মোবাইলে অথবা অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শর্ত শুধু একটাই, যাকে পাঠানো হচ্ছে তারও মোবাইলে ওই অ্যাপলিকেশন থাকতে হবে। অবাধ এবং সুরক্ষিত লেনদেনের সুযোগ নিতে তাই বাসিন্দারা ই-লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন বলে মনে করেন উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস।

নোট পরিস্থিতির চাপে এক দশকের বাঁধা ধরা মাছের দোকানই বদলে ফেলেছেন ব্যবসায়ী কুমার সরকার। একই পথে হেঁটেছেন জলপাইগুড়ির স্টেশন বাজারের মাছ বাজারের ব্যবসায়ী রাজেশ শর্মাও। গত দু’দিন সেখান থেকেই কাতলা-পাবদা কিনেছেন কুমারবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এত দিনের পুরোনো দোকান বদলে ফেলতে আক্ষেপ হয়েছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। রোজ রোজ বাকি চাওয়া সম্ভব নয়, তাই মাছের বাজারে মোবাইল দিয়ে টাকা মেটানো যাচ্ছে শুনে ওই দোকানেই যাচ্ছি।’’ মোবাইল অ্যাপলিকেশনে লেনদেন শুরু হওয়ার পরে নিশ্চিন্ত রানাবাবু। ১০ টাকার এক খিলি পান খেয়ে কেউ ৫০ টাকার নোট বের করলেই, রানা বলছেন, ‘‘নগদে নেব না, মোবাইলে দিন।’’ কী ভাবে পেটিএমে টাকা দিতে হয়, তাও শিখিয়ে দিচ্ছেন পান ব্যবসায়ী রানা, মাছ ব্যবসায়ী রাজেশবাবুরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Betel shop owner mobile wallet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE