অসুস্থ: শান্তিবালা। নিজস্ব চিত্র
হতদরিদ্র অসুস্থ এক বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলের দুরবস্থা নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন এক শিক্ষক। বালুরঘাটের ভাটপাড়া অঞ্চলের খিদিরপুর বটতলা এলাকার ঘটনা। এত কাল ভিক্ষা করে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে সংসার চলত আশি বছরের ওই বৃদ্ধা শান্তিবালা মোহান্তের। গত দু’মাস ধরে জ্বরে তিনি শয্যাশায়ী। ফলে ভিক্ষাও বন্ধ। এখন রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়ে না খেয়ে মরতে বসেছেন মা ও ছেলে। বিছানায় শুয়ে থেকেই শান্তিবালাদেবী আর্জি জানিয়েছেন সরকারি সাহায্যের।
শান্তিবালাদেবীর স্বামী গোপেশ্বরবাবু অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। ছেলে বীরেশ্বর দশ বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অর্থাভাবে তখন ছেলের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও করাতে পারেননি শান্তিবালাদেবী। দিন যত কেটেছে, ছেলের অসুস্থতা আরও বেড়েছে। ইন্দিরা আবাস যোজনায় একটা ঘর পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই ঘরে আজ থাকতে পারেন না শান্তিবালাদেবী। তাঁর কথায়, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে শ্মশান থেকে মৃতের পরনের কাপড়চোপড় ঘরে নিয়ে এসে বিশাল আকার স্তূপ বানিয়ে ফেলেছিল। তাই পাকা ঘরের পাশেই পলিথিন দিয়ে ঘিরে একটি বাঁশের মাচায় দিনযাপন করেন শান্তিবালাদেবী।
শুধু বীরেশ্বরই নয়, শান্তিবালাদেবীর আরও দুই ছেলে এবং চার মেয়ে। তাঁদের মধ্যে এক ছেলে আগেই মারা গিয়েছেন। মেয়েদেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই ছেলের মধ্যে এক জন থাকেন রায়গঞ্জে। শান্তিবালাদেবীর সঙ্গে তাই এখন শুধু বীরেশ্বরই থাকেন।
অসুস্থ শান্তিবালাদেবী জানান, বীরেশ্বর একটা সময় খুব ভাল কাঠের কাজ করতেন। কাঠের কাজটা শিখিয়েছিলেন তাঁর বাবা গোপেশ্বর মোহান্তর কাছে। এর পরই এক সময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বীরেশ্বর। ভিক্ষা বৃত্তির ও বার্ধক্য ভাতার সামান্য টাকা দিয়ে দু’বেলা কোনও রকম খাবার জোগাড় হলেও ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারেন নি ওই বৃদ্ধা।
ওই এলাকার পাশে সাহেবকাছারি পাড়ার স্কুল শিক্ষক শক্তিপদ চন্দের বাড়িতেও সপ্তাহে এক দু’বার ভিক্ষা করতে যেতেন ওই বৃদ্ধা। মাস দুয়েক থেকে তিনি আর ভিক্ষাবৃত্তি করতে না আসায় ওই শিক্ষক শনিবার খোঁজ খবর নিতে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে এসে জানতে পারেন তাঁদের দুরবস্থার কথা। তখনই তিনি ঠিক করেন, এই নিয়ে প্রশাসনের কাছে দরবার করবেন।
শক্তিপদর কাছে শান্তিবালাদেবী জানান, হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাস দুয়েক তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছেন না। ফলে আর ভিক্ষাই বা করবেন কী করে! ওষুধ কেনার টাকা নেই। পেটে খাবারও জুটছে না। অন্য দিন ভিক্ষা করতে বেরিয়ে আনাজপাতি বা চালও পেতেন। এখন সবই বন্ধ।
শান্তিবালাদেবী ও তাঁর ছেলের অবস্থা দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি শক্তিপদবাবু। তিনি জানান, এই বৃদ্ধা যখন তাঁদের বাড়িতে ভিক্ষা করতে যেতেন, তাঁরা সাধ্যমতো মাঝেমধ্যে ১০০-২০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন। এ বারে বৃদ্ধার বাড়ি এসে তিনি মানসিক ধাক্কা খেয়েছেন। এই অবস্থায় যদি বৃদ্ধা পড়ে থাকেন, তা হলে না খেয়ে মরতে হবে তাঁকে। চিকিৎসাও করানো যাবে না। ছেলেকে তো পাওয়াই যায় না। সে কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে!
শক্তিপদ বলেন, ‘‘এই অবস্থা দেখে সাধ্যমতো টাকাপয়সা দিয়ে এসেছি। ওষুধপত্রও কিনে দিয়েছি।’’ সামনের মাসেই চাকরি থেকে অবসর নেবেন শক্তিপদ। তার পরে আর বড় সাহায্য করা তাঁর পক্ষে কঠিন। তাই তিনি অসহায় বৃদ্ধা ও তাঁর অসুস্থ ছেলের দেখভাল করার জন্য প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy