নিজস্ব চিত্র
রায়গঞ্জে প্রায় নিত্যই চলছে গুলি। জেলার অন্যত্রও যখন তখন বার হয়ে পড়ছে আগ্নেয়াস্ত্র। এই ঘটনায় পুলিশের কপালে এর মধ্যেই চিন্তার ভাঁজ। অস্ত্রের এই রমরমা গোড়া থেকে ঠেকাতে চাইছে তারা। প্রথমেই দেখা হচ্ছে, এত অস্ত্র আসছে কোথা থেকে। তার পরে খোঁজা হচ্ছে, কী ভাবে, কোন পথে অস্ত্র ঢুকছে জেলায়? তদন্তে নেমে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানতে পেরেছে, আনাজ, মাছ-সহ বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়িতে করে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে উত্তর দিনাজপুরে। পণ্যবাহী এমন বহু গাড়িতে পণ্যের আড়ালে লুকিয়ে পাঠানো হচ্ছে অস্ত্র। এমনকী, রোগী নিয়ে যে অ্যাম্বুল্যান্স আসছে, তাকেও সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ রাখা যাচ্ছে না। এ সব তথ্যই পুলিশকে চিন্তায় ফেলেছে।
রাজ্য গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সম্প্রতি এই নিয়ে পুলিশকে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ট্রেন, ট্রাক, বাস, কখনও অ্যাম্বুল্যান্সে করেও আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে জেলায়। কারবারিরা ট্রেনে করে সহজেই ওই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বাংলা-বিহার সীমানায় বিহারের দিকে কোথাও মজুত করছে। অভিযোগ, বিশেষ করে বারসই, কিসানগঞ্জ, ঠাকুরগঞ্জ, গলগলিয়া, পথিয়ার মতো এলাকায় অস্ত্র লুকিয়ে মজুত করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, মুঙ্গের বা বিহারের অন্য শহরে তৈরি এই সব অবৈধ অস্ত্র ট্রেনে চাপিয়ে বাংলা সীমানায় নিয়ে আসা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তল্লাশি কম বলেও দাবি জেলা পুলিশের।
গোয়েন্দাদের দাবি, এর পরেই কাজে লাগানো হয় ‘ক্যারিয়ার’দের। তারা মোটরবাইক, ছোট গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্সে করে উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য মোটা টাকা দেওয়া হচ্ছে তাদের। তেমনই আবার বিহার থেকে ট্রেনে আলুয়াবাড়ি হয়েও কিছু ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে বলে সন্দেহ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কী ভাবে অস্ত্র আসছে জানার পরেও কেন পুলিশ তা ঠেকাতে পারছে না? পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েই অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। জেলা পুলিশ সুপার সুমিত কুমার অবশ্য বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় নাকা তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। বিহার, বাংলা সীমানায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি শুরু হয়েছে। কোনও ভাবেই যাতে বাইরে থেকে আগ্নেয়াস্ত্র না ঢোকে, সে জন্য সমস্ত থানাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, বিহার থেকে জেলায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবেশ রুখতে রায়গঞ্জ, করণদিঘি, ডালখোলা, চাকুলিয়া, গোয়ালপোখর ও ইসলামপুর থানার বিহার সীমানায় একাধিক চেকপোস্ট করে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, জেলা পুলিশের তরফে বিহার পুলিশকেও সতর্ক করা হয়েছে। জেলার ১০টি থানার ট্র্যাফিক পুলিশকে রাজ্য ও জাতীয় সড়কে সন্দেহজনক বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে তল্লাশিরও নির্দেশ দিয়েছে জেলা পুলিশ।
কয়েকটি ক্ষেত্রে অবৈধ ভাবে আনা আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার্ড দোকান থেকে কেনা হয়েছে বলেও পুলিশের কাছে তথ্য এসেছে। লাইসেন্স ছাড়া সেগুলি কী ভাবে দুষ্কৃতীদের হাতে এল তা নিয়ে চিন্তায় গোয়েন্দা পুলিশ।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy