Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

লক্ষ্মী পূর্ণিমায় রাসচক্রে হাত দেন আলতাফ

লক্ষ্মী পূর্ণিমা থেকে রাস পূর্ণিমা। বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই কোচবিহারের আলতাফ মিঁয়ার। তিন দশকেরও বেশি সময় থেকে তিনি ওই সময়টা ব্যস্ত থাকেন রাসচক্র তৈরির কাজে। এ বারেও শনিবার লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকেই রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু করেছেন তিনি।

কাজে বসেছেন আলতাফ।

কাজে বসেছেন আলতাফ।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৫
Share: Save:

লক্ষ্মী পূর্ণিমা থেকে রাস পূর্ণিমা। বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই কোচবিহারের আলতাফ মিঁয়ার। তিন দশকেরও বেশি সময় থেকে তিনি ওই সময়টা ব্যস্ত থাকেন রাসচক্র তৈরির কাজে। এ বারেও শনিবার লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকেই রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু করেছেন তিনি। কোচবিহার শহর লাগোয়া হরিণচওড়ার তোর্সার বাঁধের পাড়ের বাড়িতে রাসপূর্ণিমা পর্যন্ত টানা ওই কাজ চলবে। ফি বছরের মত এ বারেও আলতাফের তৈরি রাসচক্র ঘুরিয়ে আগামী ১৪ নভেম্বর রাস উৎসবের সূচনা হবে।

উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় মেলা কোচবিহারের রাসমেলার দর্শনার্থীদের কাছেও ওই রাসচক্র খুবই আকর্ষণীয়। উৎসবের সূচনার পর তো বটেই, মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও ওই রাসচক্র ঘোরাতে ভিড় জমান। কোচবিহারের জেলাশাসক তথা দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি পি উল্গানাথন বলেন, “বংশানুক্রমিকভাবে ওই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আলতাফ অত্যন্ত যত্ন করে নিয়ম মেনে যেভাবে রাসচক্র তৈরির কাজ করেন তা ভীষণ গর্বের। সম্প্রীতির নজির।”

ইতিহাসের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কোচবিহারের রাসমেলা দুশো বছরেরও বেশী প্রাচীন। ১৮১২ সালে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ ভেটাগুড়িতে রাসমেলার সূচনা করেন। ১৮৯০ সালে কোচবিহারের বৈরাগীদিঘির পাড়ে মদনমোহন তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়। সেই সময় থেকেই মন্দির সংলগ্ন এলাকায় মেলা বসছে। রাসপূর্ণিমায় বিধি মেনে বিশেষ পুজো করে সূচনা হয় রাস উৎসবের। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করেছেন। পরবর্তী সময়ে দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা জেলাশাসক দিনভর উপোস থেকে পুজো করেন। তিনিই সবার আগে রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করেন। ফি বছর ওই সূচনা পর্বের পরেই রাসচক্র ঘোরাতে মদনমোহন মন্দিরে পূণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। ফলে ফি বছর রাসের কাউন্টডাউন শুরু হতেই রাসচক্র তৈরিতে বাড়তি জোর দেওয়া হয়।

আলতাফের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, একসময় আলতাফের দাদু পান মহম্মদ মিঁয়া, বাবা আজিজ মিঁয়া ওই কাজ করতেন। এখন সেই ভার আলতাফের হাতে। দেবোত্তরের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে প্রায় এক দশক কাজ করছেন আলতাফ। কিন্তু লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন হলেই রাসচক্র তৈরির কাজ শুরুতে ভুল হয় না পঞ্চাশোর্ধব আলতাফের। বাড়ির দাওয়ায় বসে তিনি বললেন, “এত বড় গুরু দায়িত্ব আমার ওপর। পূর্বপুরুষদের হাত ধরে পাওয়া কাজ। তাই লক্ষ্মীপুজোর দিন থেকে ফি বছর কাজ শুরু করতে ভুল হয় না।”

ছেলে আমিনুর হোসেন, স্ত্রী বাবলি বিবিও বাঁশ কাটা, কাগজ কাটা থেকে নানাভাবে রাসচক্র তৈরিতে সাহায্য করেন। আলতাফ জানান, পারিশ্রমিক বা পাওনাগন্ডা নিয়ে এখন তিনি কিছু ভাবতে চান না। রাসচক্র তৈরির জন্য অস্থায়ী কর্মীর কাজ থেকে কিছুদিন ছুটি পেলে ভাল হয়। কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক তথা ট্রাষ্ট বোর্ডের সদস্য অরুন্ধতী দে বলেন, “এ নিয়ে কোনও আবেদন পেলে ওই বিষয়টি দেখা হবে।” নিজস্ব চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

Altaf mia Rashchakra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE