Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সস থেকে ঘি, ভেজালে ভয়

ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া এলাকা এবং ফুলবাড়িতে কোনও কোনও বাড়ির ভিতরে প্রায় এক ডজন ভেজাল সস তৈরির ঘাঁটি রয়েছে। পচা কুমড়ো, মেয়াদ উত্তীর্ণ ফলের রস, নানা ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘সস’।

ভেজাল: বোতলবন্দি এই সসেই  মিশছে ভেজাল। নিজস্ব চিত্র

ভেজাল: বোতলবন্দি এই সসেই  মিশছে ভেজাল। নিজস্ব চিত্র

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০৩:৩৯
Share: Save:

মশলা থেকে ঘি বা সস, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরির অন্যতম ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে শিলিগুড়ি। শহর ও শহরতলির বেশ কয়েকটি গোপন আস্তানায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল খাদ্য সামগ্রী। শিলিগুড়ি থেকে সেগুলি ছড়িয়ে পড়ছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে। কখনও নামী সংস্থা, কখনও নিজেদের পছন্দসই নাম দেওয়া সংস্থার প্যাকেটে ভর্তি ভেজাল সামগ্রীতে ছেয়ে গিয়েছে উত্তরের বাজার। শিলিগুড়ি থেকে ওইসব সামগ্রী যাচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভুটানেও। উত্তরবঙ্গ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় টিব্রেয়াল বলেন,‘‘ভেজাল কারবার হচ্ছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। যারা ওই কারবারের সঙ্গে যুক্ত তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিত।’’

সূত্রের খবর শহরের খালপাড়া, নয়াবা জার, ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, উত্তরকন্যা লাগোয়া ফুলবাড়ি শিল্পতালুক, মাটিগাড়াতে রয়েছে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরির বেশ কয়েকটি গোপন ঘাঁটি। ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া এলাকা এবং ফুলবাড়িতে কোনও কোনও বাড়ির ভিতরে প্রায় এক ডজন ভেজাল সস তৈরির ঘাঁটি রয়েছে। পচা কুমড়ো, মেয়াদ উত্তীর্ণ ফলের রস, নানা ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘সস’। বাজার থেকে কিলো দরে ফেলে দেওয়া বিয়ারের বোতল কিনে সেগুলিতে ভরা হচ্ছে তা। তারপর বোতলের গায়ে কখনও নামী সংস্থার কখনও নিজেদের পছন্দসই সংস্থার লেভেল সেঁটে বিক্রি করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার বলেন, ‘‘ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরির অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

ভেজাল ঘাঁটিতে জিরে সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ‘সুলফা’ নামে এক ধরনের ঘাসের বিজ। জিরের মতো দেখতে ওই বিজ অসম থেকে শিলিগুড়ির বাজারে আসছে। ২০-২৫ টাকা কিলো দরে সেই বিজ পাওয়া যাচ্ছে শিলিগুড়িতে। আসল জিরের সঙ্গে সুলফা মিশিয়ে ২০০ টাকা কিলো দরে তা বিক্রি হচ্ছে।

কালো জিরের সঙ্গে মেশান হচ্ছে পোড়া মবিল ও মাটি। মুর্শিদাবাদ থেকে এক ধরনের মাটি এনে তারজালিতে ঘসে সেগুলিকে কালোজিরের আকৃতি দেওয়া হচ্ছে। তারপর তাতে পোড়া মোবিল মিশিয়ে কালো রং করে রোদে শুকিয়ে আসল কালোজিরের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নামি কোম্পানির ১ গ্রাম কেশরের দাম ৫০০-৭০০ টাকা।

তবে শিলিগুড়িতে প্রতিগ্রাম কেশর মিলছে ১০০-১৫০ টাকা দরে। ভেজাল কেশর তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঁচা ভুট্টার গায়ে লেগে থাকা আঁশ। সেই আঁশগুলি আকৃতি অনুসারে কেটে তাতে রং ও সুগন্ধি মেশানো হচ্ছে। তার পর নামমাত্র আসল কেশরের সঙ্গে সেগুলি মিশিয়ে নামি কোম্পানির প্যাকেটে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। হলুদ থেকে জিরে বা ধনিয়া গুড়ো সবেতেই মিশছে ভেজাল সামগ্রি। ধনিয়া গুঁড়োতে মেশানো হচ্ছে কাঠের গুড়ো।

ভেজাল ঘি-তে ছেয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির বাজার। দুধ ছাড়াই অপরিশ্রুত পাম তেল, সুগন্ধি, নানা ধরনের রাসয়নিক মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘি। শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক সিরাজ দানেশ্বর বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

যাতে যা মিশছে

•জিরেতে মেশানো হচ্ছে সুলফা

•কালোজিরেতে মিশছে পোড়া মোবিল ও মাটি

•ধনিয়া গুড়োতে মিশছে কাঠের গুঁড়ো

•ঘিতে মেশানো হচ্ছে অপরিশ্রুত পাম তেল

•কেশরে মিশছে কাঁচা ভুট্টার গায়ে লেগে থাকা আঁশ

•সসে মেশানো হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ ফলের রস

অন্য বিষয়গুলি:

Sauce Ghee Adulterated ভেজাল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE