সঙ্গীতা সরকার এবং শীলা পাল।
স্বপ্ন সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় সফল হওয়ার। আঁধারঘরে থেকে স্বপ্ন শিক্ষার আলোকে অন্যকে আলোকিত করা। আর সে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে দিনের পর দিন দাঁতে দাঁত চেপে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ‘বীরাঙ্গনা’ সঙ্গীতা সরকার। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর-২ ব্লকের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা সঙ্গীতা।
বছর ছয়েক আগে, তাঁর বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু যাবতীয় বিরুদ্ধ মতের মোকাবিলা করে সে বাল্যবিবাহ রুখে দিয়েছিলেন নিজেই। তার পরে, লেখাপড়া শিখে এখন দর্শনে স্নাতক।
সঙ্গীতা সরকার মাধ্যমিক পাশ করার পরে তাঁর বিয়ের ঠিক করেছিলেন বাবা-মা। কিন্ত তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, পড়তে চান। সেখানেই থামেননি। পড়াশোনা করতে চেয়ে স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বাড়ির পরিস্থিতির কথা জানান। প্রধান শিক্ষক-সহ অন্য শিক্ষকেরা বাবা-মাকে বুঝিয়ে সঙ্গীতার বিয়ের পরিকল্পনা বাতিল করেন। সে সঙ্গীতাই ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে রামকৃষ্ণপুর পিডিজিএম হাইস্কুল থেকে ৪৬৭ নম্বর পেয়ে গোয়ালপোখর-২ নম্বর ব্লকে সেরা হন। তাঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে ২০১৯ সালে সাহসিকতার জন্য আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে রাজ্য শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিটি সাহসিকতার জন্য বীরাঙ্গনা পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
চাকুলিয়ার গ্রামে ছোট্ট বাড়িটাতে আজ শুধুই স্বপ্নপূরণের কথা। অভাবকে সঙ্গী করে সঙ্গীতা রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স করে এখন সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যেই লকডাউনের সময় এলাকার কিছু কচিকাঁচাকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াশোনার কাজে সাহায্য করেছেন। সঙ্গীতা বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে ইচ্ছে, সিভিল সার্ভিসেস পাশ করে প্রশাসক হওয়ার।’’ সে স্বপ্নে এখন প্রধান বাধা সংসারের আর্থিক অনটন। বাবা পঙ্কজ সরকার গ্রামের হাটে ফল বিক্রি করেন। মা একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে কাজ করেন। দাদা একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বোন ইসলামপুর কলেজে পড়াশোনা করছে। পাঁচ জনের সংসারে এত অল্প আয় নিয়ে উদ্বেগে সঙ্গীতা। এলাকায় কোচিং কোন ব্যবস্থা নেই। তাই অনলাইনে মেলা তথ্য আর সংবাদপত্র তাঁর কাছে শিক্ষক।
মেয়ে যে আঁধার ঘরে শিক্ষার আলো ফোটাতে পেরেছেন, তাতে খুশি সঙ্গীতার বাবাও। বললেন, ‘‘মেয়ের কাছে হেরেছি! লজ্জা নেই এতে।’’ তিনি এখন চান, মেয়ে পড়াশোনা করুক। মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হোক। তার পরে, বিয়ের চিন্তাভাবনা।
উত্তর দিনাজপুরে খুব একটা এগিয়ে থাকা ব্লক নয় গোয়ালপোখর-২। এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার স্কুল নেই। নেই কলেজ। বিডিও কানাইয়াকুমার রায় বলেন, ‘‘সঙ্গীতার লড়াই অনুপ্রেরণা জোগাবে অন্যদের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy