বিকল্প জ্বালানির খোঁজে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গবেষণা ‘নজর’ কেড়েছে বিদেশি সংস্থার। জল থেকে হাইড্রোজেন জ্বালানি বার করা নিয়েই গবেষণা করছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একটি দল। সিঙ্গাপুরের ওই সংস্থা এ বার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ওই দলের সঙ্গেই ‘জোট’ বাঁধছে বাণিজ্যিক উৎপাদনের পথ খুঁজতে। সব কিছু ঠিক থাকলে সোমবার তা নিয়ে ‘মউ’ স্বাক্ষর করা হতে পারে।
সিঙ্গাপুরের ওই সংস্থার ‘ইনকিউবেশন সেন্টার’ (যেখানে গবেষণার কাজ হয়ে থাকে) রয়েছে ‘ন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে’। সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গৌতম কুমার দলপতি আদতে ভারতীয়, মেদিনীপুরের বাসিন্দা। এখন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রধান ভাস্কর বিশ্বাসের নেতৃত্বে ওই গবেষক দলের কাজ নিয়ে ‘মউ’ সই করতে তিনি নিজেই এসেছেন শিলিগুড়িতে।
কী করে ওই সংস্থার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ হল?
রসায়ন বিভাগের প্রধান জানান, গত বছর নভেম্বরে তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন বিকল্প জ্বালানির উৎস হাইড্রোজেনের উপরে তাঁদের কাজ নিয়ে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী নভ সেলভ। আদতে রাশিয়ার বাসিন্দা হলেও এখন তিনি ব্রিটেনেরও নাগরিক। ২০১০ সালে ‘গ্রাফিন’ নামক পদার্থ নিয়ে তাঁর কাজের অবদানের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি ভাস্কর বিশ্বাসের কাজের উপরে বক্তব্য শুনে উৎসাহী হন। তাঁর সঙ্গে ওই সংস্থার যোগাযোগও করিয়ে দেন। সেই মতো কর্থাবার্তা এগিয়েছিল। ‘ভার্চুয়াল’ ভাবে চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরে এ বার কাগজে-কলমে সইসাবুদ হতে চলেছে।
এই চুক্তি হলে ওই সংস্থা তাদের কাজের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলের পরামর্শ নেবে। সেই সঙ্গে যৌথ ভাবে জ্বালানি হাইড্রোজেন উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন ‘ইলেক্ট ক্যাটালিস্ট’ তৈরির কাজও করবে। সেই মতো তারা অর্থও দেবে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলটিকে।
গবেষণার কাজের মূল বিষয়টি কী?
রসায়ন বিভাগের প্রধান বলেন, ‘‘জল থেকে হাইড্রোজেন জ্বালানি পেতে দরকার ক্যাটালিস্ট। তার সাহায্যে কত সহজে এবং পরিবেশ বাঁচিয়ে জ্বালানি হাইড্রোজেন উৎপাদন করা যাবে, তা নিয়েই গবেষণা করা হয়। ইতিমধ্যে গোটা ২০টি ক্যাটালিস্ট বার করা হয়েছে। তার মধ্যে উন্নত মানের রয়েছে গোটা পাঁচেক। আরও নতুন ক্যাটালিস্ট বার করতে কাজ চলছে।’’ উম্ভাবন করা ক্যাটালিস্টগুলির মধ্যে একটির নামকরণও করা হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ‘এনবিইউ-ফোর’। রসায়ন বিভাগের প্রধানের সঙ্গে ওই গবেষণায় সক্রিয় ভাবে যুক্ত গবেষক সঙ্ঘরাজ দেওয়ালি, নীলাঙ্কর দেওয়ালি, শুভজিৎ সাহা, মীনা ছেত্রীরা। তাঁরাও জানান, ভাল কিছু করার জন্য তাঁরা এই কাজকে আরও এগিয়ে নিতে চান।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)