এক দিনের দিল্লি সফরে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার সকালের বিমানে রাজধানী রওনা হওয়ার আগে নন্দীগ্রামের বিধায়ক জানিয়েছিলেন, রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দিল্লির বাসভবনে সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সন্ধ্যায় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকের পর শুভেন্দু যান শাহের বাসভবনে। সেখানে দুই নেতার মধ্যে প্রায় আধ ঘন্টা একান্তে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি ছবি পোস্ট করেন বিরোধী দলনেতা। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি আমাকে তাঁর বাড়িতে ৩০ মিনিট বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছিলেন। আমরা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামীর পথ চলা নিয়ে আলোচনা করেছি।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি তাঁর মূল্যবান পরামর্শ আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের কাজে লাগবে।’’
বৈঠক প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিরোধী দলনেতা। তবে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের মতে, যে হেতু পশ্চিমবঙ্গের ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২৫টি জেলার সভাপতিদের নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে তাই বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে কোনও মুহূর্তে নতুন রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা করতে পারেন। তাই নতুন সভাপতি দায়িত্বগ্রহণের আগে শুভেন্দুর মতো নেতার সঙ্গে আলোচনা জরুরি ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী দলনেতার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। তবে বিজেপির আরও একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের রণকৌশল কী হবে সেই বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড় তুলেছেন তার মোকাবিলা করার জন্য বিজেপির নেতৃত্বের রণনীতি কী হতে পারে সেই বিষয়ে কথা হয়েছে শাহ-শুভেন্দুর।
মমতার ভুয়ো ভোটার অভিযোগের পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ এনেছেন শুভেন্দু। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বলেও বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর কলেজ যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে সরস্বতী পুজো নিয়ে গোলমাল, হরিণঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় পুজোয় বাধা দেওয়ার ঘটনা নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে। সম্প্রতি যাদবপুরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠনের হামলার ঘটনার পর পরিস্থিতি কোন দিকে এগিয়েছে, সেই বিষয়েও শাহ খোঁজখবর নিয়েছেন শুভেন্দুর থেকে। নীতিগত কারণেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি বাম ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে আদি বৈরিতা রয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির। তাই সেই শক্তি যাতে কোনও ভাবেই পশ্চিমবঙ্গে মাথাচাড়া না দিতে পারে, সেই বিষয়টিও মাথায় রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। তাই শুভেন্দুর মতো একজন বিচক্ষণ নেতার থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছেন শাহ, এমনটাই সূত্রের খবর।