মাটিগাড়ার লিচু বাগানের বাড়ি থেকে বুধবার পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন সুবাস ঘিসিঙ্গ। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
লোকসভা ভোটের আগে দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনীতিতে ফের যেন অনেকটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিঙ্গ। বুধবার বিকেলে শিলিগুড়ি লাগোয়া মাটিগাড়ার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে তিনি দার্জিলিং পৌঁছন। কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যে জাকির হোসেন রোডে নিজের বাড়িতে ফিরে ঘিসিঙ্গ দাবি করেন, “পাহাড়ের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও জিএনএলএফের সঙ্গে আছেন। সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি ছাড়া নির্দল প্রার্থী মহেন্দ্র পি লামা জিএনএলএফের সমর্থন চেয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর তাঁরা জানিয়ে দেবেন, জিএনএলএফের ভোটের রণনীতি কী হবে।
ঘিসিঙ্গের কথায়, “ভোট এখনও দেরি আছে। মনোনয়ন পত্র পরীক্ষার পরে বোঝা যাবে কারা প্রার্থী থাকছেন। সবাই আমাদের সমর্থন চাইছেন। দল বৈঠক করে তা ঠিক করবে।” ষষ্ঠ তফসিল, গোর্খাল্যান্ড আর মোর্চা এই তিন প্রশ্নের উত্তরে জিএনএলএফ প্রধান বলেন, “আলাদা রাজ্য কী ভাবে কী করতে হয় তা আমরা জানি। এখন কিছু বলব না। আর মোর্চার অবস্থা এখন কী তা সবাই জানেন। আমার নতুন করে বলার নেই। তবে ষষ্ঠ তফসিল এখনও বাতিল হয়নি। স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে রয়েছে। ভোটের পরেই দিল্লি যাব।”
২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের সময় ঘিসিঙ্গ পাহাড়ে যান। কার্শিয়াং, কালিম্পং এবং দার্জিলিং আসনে জিএনএলএফ প্রার্থীও দেয়। কিন্তু ভোটপর্ব মিটতেই মোর্চা-জিএনএলএফ সংঘর্ষ শুরু হয়। তাঁকে নানাভাবে হুমকি দেওয়ার দলীয় কর্মীদের নিরাপত্তার কথা বলে তিনি ২০১১ সালের ১৬ মে পাহাড় ছাড়েন। ফের ফিরে যান জলপাইগুড়িতে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি মাটিগাড়া লিচুবাগানের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ভাড়া বাড়িতে করে নতুন করে সংগঠনের কাজ শুরু করেন। প্রায় এক বছর পর এ দিন ফের তিনি দার্জিলিং ফেরায় পাহাড় জুড়ে জিএনএলএফ কর্মীরা উৎসবে মেতে ওঠেন।
গত বিধানসভার ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতির মধ্যেও জিএনএলএফ পাহাড়ে ৫০ হাজারের কাছাকাছি ভোট পায়। তবে শান্তা ছেত্রী, রাজেন মুখিয়ার দলীয় নেতারা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কিছুদিন দলীয় সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। বছর খানেক আগে থেকে ফের সংগঠন মজবুত করার কাজে নামেন ঘিসিঙ্গ। সম্প্রতি তরাইয়ের শিমুলবাড়ির মত এলাকায় দলের সভায় ভিড় উপচে পড়ে। এরই মধ্যে পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে ‘গ্রাম কমিটি’ তৈরি হয়। সেখান থেকে বহু পুরনো কর্মী, সমর্থক তলায় তলায় দলের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন। লোকসভা ভোটকে ঘিরে মোর্চা-তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হতেই তৎপর হয়ে ওঠেন ঘিসিঙ্গ।
এ দিন সুকনা থেকে রংটং, চুনাভাটি থেকে কার্শিয়াং, সোনাদার মতো এলাকায় ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে দলীয় কর্মীরা ঘিসিঙ্গকে পাহাড়ে স্বাগত জানান। দুপুরে সুকনা এলাকায় তাঁর ২০টি গাড়ির কনভয় থামিয়ে দেন উৎসাহী কর্মীরা। সবুজ আবির ছড়ানো খুকরি সজ্জিত দলীয় পতাকা নিয়ে স্লোগান চারিদিকে ফেটে পড়তে থাকে। এরই মধ্যে আবহাওয়া খারাপ হয়ে শিলাবৃষ্টি এবং হালকা ঝড় শুরু হয়। ছিরিং দাহাল, নিমা ভুটিয়ার মত জিএনএলএফ নেতানেত্রী বলতে থাকেন, “পাহাড়ের ‘সাহেব’কে স্বাগত জানাচ্ছে প্রকৃতিও। আর এই ঝড়-বৃষ্টি মোর্চাকে বার্তা দিচ্ছে, তাঁদের সময় এবার শেষ। সুবাস ঘিসিঙ্গ পাহাড়ের রাজনীতি আবার নিয়ন্ত্রণ করবেন।”
পাহাড়ে ফেরা নিয়ে ঘিসিং-ও এ দিন যথেষ্টই উৎসাহী ছিলেন। সকাল থেকে পুজো অর্চনা সেরে পৌনে একটা নাগাদ তিনি পাহাড়ে রওনা হন। চিরাচরিত সেই সাদা জামা, ধূসর প্যান্ট, গোর্খা টুপি, কালো টাই, কালো জুতো এবং হাতে চামড়ার ব্যাগ। তিনি বাড়ির বাইরে আসার আগে অবশ্য লিচুবাগান এলাকায় দলীয় নেতা কর্মীদের ভিড়ে ভরে যায়। তবে তিনি আগেই বাড়ির তিনতলা থেকে তাঁদের এলাকায় ফিরে গিয়ে সংগঠনের কাজে মন দেওয়ার জন্য চলে যেতেন বলেন। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার গোটা রাস্তায় দলীয় নেতা-কর্মীদের হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ঘিসিঙ্গ নিজের পুরনো বাড়িতে ফেরেন।
দার্জিলিং পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাড়িতে আগে থেকেই প্রায় হাজার দু’য়েক দলীয় নেতা কর্মীরা জড়া হয়ে ছিলেন। তাঁকে দেখেই আবির উড়িয়ে হইচই শুরু করেন তাঁর দলের অনুগামীরা। শুরু হয় স্লোগান। ভিড় ঠেলে বাড়িতে ঢুকে ঘিসিঙ্গ বলেন, “এ বার পাহাড়ে পাকাপোক্তভাবে থাকতে চাই।” তবে বিজেপি জিএনএলএফের সমর্থন চায়নি বলে দাবি করেছেন প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তিনি বলেন, “আমরা ঘিসিঙ্গকে টেলিফোন করিনি। আমরা মোর্চার সঙ্গেই আছি।” মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “ওঁকে নিয়ে আমরা ভাবছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy