বাগডোগরা বিমানবন্দরে মরদেহে শ্রদ্ধার্ঘ্য মন্ত্রী গৌতম দেবের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
কোনও ‘জাদুবলে’ তিনি যদি চোখ খুলতে পারতেন, তা হলে হয়তো চমকে যেতেন। কারণ, পাহাড়ের ‘জাদুকর’-এর মরদহের পাশে কে নেই! রাজ্যের মন্ত্রী থেকে পদস্থ পুলিশ অফিসার, বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীদের ভিড় উপচে পড়েছে। অথচ প্রায় ৮০ বছর বয়সে রাজনৈতিক জীবনের শেষার্ধ্বে অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু, মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পরে তাঁর পাশেই নেতা-মন্ত্রীর ভিড়।
৮০ দশকের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেওয়া জিএনএলএফের মাধ্যমে প্রায় আড়াই দশক তিনিই ছিলেন পাহাড়ের ‘রাজা’। পুরসভা থেকে পার্বত্য পরিষদ, বিধানসভা থেকে লোকসভা ভোট তাঁর ইচ্ছানুসারেই প্রত্যাশীরা জনপ্রতিনিধির তকমা পেতেন। ২০০৭ সালে বিমল গুরুঙ্গের নেতৃত্বে মোর্চা উত্থানের পর ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। প্রায় চার বছর তিনি পাহাড় ছাড়া ছিলেন। সেই সময় অনেকেই ভেবেছিলেন, জিএনএলএফ শেষ হতে চলছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ভুল প্রমাণিত করেই ২০১১ সালে বিধানসভায় তাঁর প্রার্থীরা জিততে না পারলেও প্রচুর ভোট পান। শেষ লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন করে তিনি মোর্চার লড়াই অনেকটাই ‘কঠিন’ করেও তোলেন।
সেই সময়ই পাহাড়, সমতলেরক মানুষ বুঝে যান, পাহাড়ের বাইরে থাকলেও পাহাড়বাসীর একটা অংশ এখনও তাঁর পাশেই রয়েছে। শুক্রবার তাঁর মরদেহ যখন বাগডোগরা বিমানবন্দরের মাটি ছুঁইয়েছে, তাঁর অন্তত চার ঘন্টা আগে থেকেই বিমানবন্দর ভরে গিয়েছিল দলীয় কর্মী সমর্থকদের ভিড়ে। আর ভিড়ের ফাঁকেই দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস, সিপিএম, মোর্চা ছাড়াও পাহাড়ের ছোট ছোট দলের দলের একাধিক নেতা-কর্মীদের। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পাহাড় সমতলের একঝাঁক তৃণমূল নেতানেত্রী।
যাকে জিএনএলএফের নেতা কর্মীরা অবশ্য অন্য চোখে দেখেছে। তাঁদের অনেকেই বলতে শোনা গিয়েছে, প্রয়াত নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সবাই এসেছিলেন ঠিকই। তবে অনেকের মধ্যেই দলের নেতাকর্মীদের নিজেদের দিকে টানার ঝোঁকও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন জিএনএলএফ দলের কী হবে জাতীয় কথাবার্তাও অনেকে বলে গিয়েছেন।
আশঙ্কা দূর করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটিই রাখেননি জিএনএলএফ নেতারা। এর পর দল ছাড়ার হিড়িক যাতে না পরে তাই দেরি না করে তড়িঘড়ি প্রয়াত নেতার ছেলে মোহন ঘিসিঙ্গের নাম সভাপতি করে আন্দোলনের নামে স্লোগানও দিয়ে দেওয়া হয়। দলের দার্জিলিং সদর (২) কমিটির আহ্বায়ক শিবরাজ থাপা বলেন, “মোহন এক দশক ধরে সব সময় বাবা’র পাশে থেকেছেন। ওঁর নেতৃত্বেই জিএনএলএফ আরও মজবুত হবে। প্রয়াত নেতার চিকিৎসার জন্য চা বাগানের কর্মীরা আর্থিক সাহায্য করেছেন। অন্য দলের জন্য তা তো চিন্তার কারণ হবেই।”
পাহাড়ের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঘিসিং-র পাহাড় ছাড়ার পর থেকেই দল ছেড়ে তৃণমূল বা মোর্চায় যাওয়ার ঝোঁক বাড়তে থাকে। সেখানে তাঁর মৃত্যুর পর দলকে একজোট করে রাখার জন্য ঘিসিঙ্গকে ছেলেকে সামনে আনা ছাড়া উপায় ছিলেন জিএনএলএফ নেতাদের। প্রাক্তন ‘রাজার’ জায়গায় অজ্ঞাতবাসে থাকা ‘যুবরাজকে’ বসিয়ে সে চেষ্টা করা হচ্ছে। মোর্চার বিধায়ক হরকা বাহদুর ছেত্রী বলেন, “ওঁরা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে সভাপতি করলে ভাল করত। আসলে জিএনএলএল দল ধরে রাখার জন্য মানুষের সহানুভূতি নিতে চাইছে।”
এদিন পাহাড়ের নেতারা ছাড়া ভিড়ে এগিয়ে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকারের মত নেতারাও। তাঁরা সকলেই বিষয়টি জিএনএলএফের আভ্যন্তরীণ বিষয় হয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী তো আগামী দিনে নজর রাখার কথাও বলেছেন। তবে জিএনএলএফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি। তাঁর কথায়, “এতো নতুন কিছু নয়। অনেক দলেই তো পরিস্থিতির জেরে সভাপতি হয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ে বিরোধী রাজনীতির জন্য এটা ভাল লক্ষণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy