করলা সেতু। —নিজস্ব চিত্র।
সারি দিয়ে পেয়ারা, আঙুর, বেদানার দোকান ঠেলা গাড়িতে সাজানো। আলতা, সিঁদুর অনেকে বসেছেন। জড়িবুটি, চটি বই, সবজি, আচার নিয়ে হাক দিচ্ছেন গামছা বিক্রেতা।
কোন গাঁয়ের হাট নয় খোদ বিভাগীয় শহর জলপাইগুড়ির দিনবাজার লাগোয়া ব্যস্ততম করলা সেতুর ছবি। ওই সেতুর ফুটপাত বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই বলে অভিযোগ। রাস্তা দখল করে দোকানের সারি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জটলা। ট্র্যাফিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশা। সকাল থেকে বাইক, টোটো, সাইকেলের যানজটে কাহিল বিস্তীর্ণ এলাকা। বাইকের সামনে পড়ে অথবা রিকশার ধাক্কায় প্রতিদিন জখম হতে হচ্ছে পথচারীকে। সকালে যানজটে আটকে স্কুল পড়ুয়াদের নাকাল হতে হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও হেলদোল নেই পুরসভা ও পুলিশ কর্তাদের। অভিযোগ উঠেছে, পুরকর্তারা সমস্যা টের পেলেও ভোটের আগে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না।
এদিকে শহরবাসীর একাংশের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সেতুতে কেন বাজার বসবে। সেতু লাগোয়া বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে বাজার। সেখানে ফল, চাল, ডাল থেকে আনাজপাতি সবই বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সেতুর ফুটপাত দখল করে ক্রমশ দোকান বেড়ে চলায় বাজারে বিক্রি কমছে। অনেকেই সেতু থেকে কেনাকাটা করে ফিরে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। দুর্ঘটনা নিয়ে গোলমাল সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন। সব্জি বিক্রেতা অনুপ সরকার অভিযোগ করে বলেন, সমস্যার কথা পুরসভার কর্তাদের কয়েকবার জানানো হলেও লাভ হয়নি।
মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালান হচ্ছে। তাঁর পরে কয়েকদিন না যেতে ফের দোকান বসছে। বছরের পর বছর এভাবে চলছে বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি চেম্বার অব কমার্সের সদস্য বিশ্বজিত্ মিত্র বলেন, “সেতুতে দোকানের সংখ্যা বেড়ে চলায় একদিকে যেমন বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। অন্যদিকে দুর্ঘটনা বেড়েছে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে পথচারীদের।”
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে পারেননি পুরসভা এবং ট্রাফিক পুলিশ কর্তারা। ট্রাফিক পুলিশ ওসি সৈকত ভদ্র বলেন, “সমস্যার কথা জানি। সেতুকে দখলমুক্ত করতে পুরসভার সঙ্গে কয়েকবার যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন না যেতে ফের দোকান বসেছে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএম কাউন্সিলার প্রমোদ মণ্ডল এজন্য পুরকর্তাদের দুষেছেন। তিনি মনে করেন, শুধু উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কোন লাভ হবে না। প্রয়োজন কড়া নজরদারির। প্রমোদবাবুর কথায়, “পুলিশ সেতুকে জবরদখল মুক্ত করার পরে পুরসভার পক্ষ থেকে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সেতু জুড়ে দোকান বসছে। দুর্ঘটনা বাড়ছে।” প্রায় একই অভিযোগ পুরসভার কাউন্সিলার তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদারের। তাঁর কথায়, “ব্যস্ততম করলা সেতুকে চলাচল যোগ্য করার কথা অনেকদিন থেকে শুনছি। কাজের কাজ তো কিছু হচ্ছে না।”
কি বলছেন পুর কর্তারা? তাঁরা জানান, দিনবাজারের করলা সেতুকে দখল মুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চলছে। কিন্তু এক শ্রেণির বিক্রেতাদের জন্য সেটা সফল হচ্ছে না। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “করলা সেতু থেকে কয়েকবার দোকানের মালপত্র তুলে আনা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে ফের দোকান বসছে। যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে। কিন্তু শহরবাসী এগিয়ে না এলে একা পুরসভার পক্ষে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy