বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে ডুয়ার্সের তিনটি চা বাগানে যান মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও গৌতম দেব। রেডব্যাঙ্ক বাগানে ঢুকছে কুড়িটিরও বেশি গাড়ির কনভয়। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কনভয়ে ৮টি গাড়ি। তিনি পৌঁছনোর আগে অনুষ্ঠান মঞ্চের আশপাশে হাজির ছিল প্রশাসনের আধিকারিক এবং পুলিশ কর্তাদের আরও অন্তত ১৫টি গাড়ি। সব মিলিয়ে ২৩টি গাড়ি করে মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্তারা তেল পুড়িয়ে বহু কিলোমিটার উজিয়ে প্রথমে যান টোটোপাড়া। তারপরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। তাঁর সঙ্গে ছিল আরও তিনটি গাড়ি। মোট ২৬ গাড়ির কনভয় নিয়ে এরপরে দুই মন্ত্রী যান বন্ধ চা বাগান ঢেকলাপাড়া ও রেডব্যাঙ্কে। সব মিলিয়ে ৩টি এলাকায় মোট ৩০০ জনের হাতে ৫ কেজি করে চাল তুলে দিলেন তাঁরা। উপলক্ষ, বিশ্ব খাদ্য দিবস।
বিরোধীদের বক্তব্য, এতগুলি গাড়িতে প্রায় চারশো কিলোমিটার ঘুরে অনুষ্ঠান করে এই চাল বিলির কী প্রয়োজন ছিল? মন্ত্রীরা নির্দেশ দিলে স্থানীয় অফিসার-কর্মীরাই তো সে কাজ করতে পারতেন।
রেডব্যাঙ্ক চা বাগানটি ২০১২ সাল থেকে বন্ধ। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ টি প্ল্যানটেশন ওয়ার্কার্সের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মণিকুমার ডারনাল বলেন, “বিরাট কনভয় নিয়ে কয়েকশো কিলোমিটার দৌড়ঝাঁপ করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে সরকারের প্রচুর খরচ হল। কিন্তু শ্রমিকরা কী পেল?” তাঁর বক্তব্য, যে টাকা সরকার এই ভাবে খরচ করল, তা দিয়ে আরও অনেক শ্রমিককে চাল দেওয়া যেত। চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক জিয়াউল আলম বিশ্ব খাদ্য দিবসে খাদ্য সরবরাহ দফতরের অনুষ্ঠানকে ‘শ্রমিকদের সঙ্গে মস্করা’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “ছ’মাস হয়েছে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা আইন বলবৎ হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী রাজ্যকে ওই আইনের আওতায় আনার ঘোষণা করেননি। তার বদলে বন্ধ বাগানে অনুষ্ঠান করে মস্করা করলেন মনে হচ্ছে।”
জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, বামফ্রন্টের নেতা-মন্ত্রীরা কলকাতায় বসে নাচ গান দেখে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করতেন, তাতে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হত। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “আমিও গান শুনতে ভালোবাসি। কিন্তু অপচয় না করে আমরা ওই টাকা দিয়ে চাল কিনে শ্রমিকদের হাতে তুলে দিয়েছি।” তিনি জানান, এবার বিশ্ব খাদ্য দিবস পালনের জন্য বন্ধ চা বাগানকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
প্রায় ১২ বছর ধরে বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানও। সেখানে গিয়ে মন্ত্রী গৌতমবাবু স্বীকার করেন, ঢেকলাপাড়া ও টোটোপাড়ায় যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে। চা বাগানে ২০টি আইসিডিএস কেন্দ্র তৈরি করা হবে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, গত বছর থেকে টোটো জনজাতিদের জন্য বিনা মূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে শবর, লোধা ও বিহর জনজাতিকেও বিনা মূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। তা ছাড়া, ছ’টি বন্ধ চা বাগানের কাছে আর্দশ রেশন দোকান খোলা হয়েছে। তবে টোটোপাড়ার বাসিন্দা অশোক টোটো বলেন, “এলাকায় খাবারের সমস্যা কিছুটা মিটলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে।”
মন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, রাজ্যে অনাহার নেই। মণিকুমারবাবুর পাল্টা দাবি, “অনাহার না থাকলে অপুষ্টির সমস্যা কেন রয়েছে? সদিচ্ছা থাকলে মন্ত্রী কেন বাগান খোলা নিয়ে কোনও কথা বললেন না?” জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য পরে বলেন, “বাগান খোলা নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy