মেনুটা বদলে গিয়েছে ৩ বছরে। ২০০১ সালে মেনুটা ছিল এরকম, প্রথম দিন সন্ধ্যায় টিফিন হিসাবে পুরি, সব্জি, মিষ্টি দেওয়া হয়। রাতের খাবারে ভাত, ডাল, মাছের চচ্চড়ি আর ঝোল। সম্মেলনের শেষদিন সকালে চা, বিস্কুট। তার পর দেওয়া হয় গরম ভাত, ঘি, ডাল আর ডিমসেদ্ধ। দুপুরের মেনু তালিকায় ছিল ভাত, পাঁঠার মাংস, ডাল, সব্জি, চাটনি আর খেজুর গুড়ের রসগোল্লা।
তিন বছরের ব্যবধানে কোচবিহারে ফের আগামী ১১-১৩ জানুয়ারি সিপিএমের জেলা সম্মেলনের আসর বসছে। কোচবিহার শহরে প্রথম দুদিন রবীন্দ্র ভবনে দলের প্রতিনিধি সম্মেলন হবে। ১৩ জানুয়ারি রাসমেলার মাঠে প্রকাশ্য সভায় বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র মুখ্য বক্তা। এবার ওই প্রতিনিধি সম্মেলনের মেনুতে প্রথম দিন নৈশাহারে দেওয়া হবে স্রেফ রুটি আর সব্জি। বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ওই রুটি সংগ্রহ করা হবে। দ্বিতীয় দিন সকালে গরম ফেনা ভাতের সঙ্গে আলুসেদ্ধ। ওই দিন দুপুরের মেনু ভাত, ডাল, সব্জি আর পোনা মাছের ঝোল। সিপিএম নেতাদের একাংশের অবশ্য দাবি, মেহনতি মানুষের দলকে মানুষ যেভাবে দেখতে চান, সেভাবেই তৈরি হয়েছে মেনু তালিকা।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “মানুষ যা দিয়েছিল, তা দিয়েই দিনহাটার সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। এবারেও আমরা মানুষের সাহায্য নিয়েই সম্মেলনের আয়োজন করছি।” তাঁর কথায়, “তবে বিয়ে বাড়ির মতো বাহুল্য করার মনোভাব যাতে না জন্মায়, তা ভেবেই মেনু তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও ব্যাপার নেই।”
সিপিএম সূত্রের খবর, এবারের জেলা সম্মেলনে ৪০০ প্রতিনিধি যোগ দেবেন। স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী, নেতা মিলিয়ে উপস্থিতি দাঁড়াবে অন্তত পাঁচশো জন প্রথম দিন প্রতিনিধিদের রাতের খাবারের জন্য কোচবিহার পুরসভা এলাকার ২০টি ওয়ার্ডের এক হাজার বাসিন্দার তালিকা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দু’টি করে আটার রুটি দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন এলাকার কমরেডরা। সম্মেলনের দিন প্রতি ওয়ার্ডে অন্তত ১০ জন করে কর্মী বাড়ি বাড়ি ঘুরে দলের দেওয়া প্যাকেটে ওই রুটি সংগ্রহ করে আনবেন। রাতে সম্মেলন চত্বরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগৃহীত সব্জি দিয়ে তৈরি সব্জি পরিবেশন করা হবে। একই ভাবে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের দোরে দোরে ঘুরে কুপন দিয়ে সংগৃহীত টাকা কিংবা রান্নার সামগ্রী দিয়ে পরের দিনের খাবারের বন্দোবস্ত করা হবে। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত জনসংযোগ বাড়ানর ভাবনা থেকে ওই উদ্যোগ।
ওই পরিকল্পনা ঘিরে দলের অন্দরেই অবশ্য তীব্র আলোড়ন পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভাঁড়ারে টান পড়াতেই কি এমন মেনু পরিবর্তন? যদিও দলের কর্মীদের একাংশই তা মানতে নারাজ তাদের যুক্তি, দলের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স কত তা খোলসা করে কখনও বলা হয় না। তা ছাড়া, কোচবিহারে দলের প্রাসাদসম অফিস, বড় থেকে মাঝারি নেতাদের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে যাতায়াত, জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় একশো পার্টি অফিস, বিস্তর জমি রয়েছে। সাধারণ কর্মীদের একাংশের মতে, রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পর লেভি আদায়ে কিছুটা প্রভাব পড়লেও, রুটি সংগ্রহের মতো পরিস্থিতি দলের হয়নি। তা হলে দলকে এমন দীন দেখানোর কারণ কি, সেই প্রশ্ন উঠেছে দলের মধ্যেই। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহার বক্তব্য, “আশির দশকের আগে রুটি সংগ্রহের মতো কর্মসূচি নেওয়া হত, মানুষ দলকে আবার আগের মতো করে দেখতে চাইছেন। তা ছাড়া, এতে জনসংযোগ বাড়বে। সব ভেবেই রুটি থেকে অন্য সামগ্রী সংগ্রহের ওই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
বিরোধীরা অবশ্য সিপিএমের ওই উদ্যোগকে ‘লোক দেখানো’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “৩৪ বছরে কমরেডরা যে সারদা সহ নানা লগ্নি সংস্থার টাকায় সম্মেলনে বিলাসবহুল মেনুর খ্যাদাভ্যাস করেছেন, তাতে সংগ্রহ করা শুকনো রুটি কারও মুখে রুচবে বলে মনে হয় না। খেলেও হজম হবে না। সবটাই লোক দেখানো নাটক।” বিজেপি-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে-র টিপ্পনি, “অট্টালিকার মতো অফিস, দামি গাড়িতে যে দলের নেতারা অনেকে যাতায়াত করেন, তাঁদের এসব কাণ্ড দেখলে জনতা হাসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy