বিজ্ঞান পড়তে হুড়োহুড়ি। কিন্তু ভাষাবিজ্ঞানের ক্লাস ফাঁকা! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্গুইসটিক্স বা ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরে আসন-সংখ্যা ৮৪। ২০১৬ সালে পড়ুয়া পাওয়া গিয়েছিল ৬৫ জন। এক বছর বাদে সংখ্যাটা কমে হয় ৩০।
১৯০৪ সালে তৈরি ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে (সাবেক নাম ‘কম্পারেটিভ ফিলোলজি’) হরিনাথ দে, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার সেনের মতো দিকপালেরা পড়িয়েছেন। ছাত্র ছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহের মতো ব্যক্তি। প়ড়ুয়ার জন্য এখন হাপিত্যেশ করে বসে আছে সেই বিভাগই। পড়ুয়াদের কী ভাবে ভাষাবিজ্ঞানমুখী করা যায়, তার রাস্তা খুঁজছেন বিভাগের পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষিকা— মীনা দাঁ, অভিজিৎ মজুমদার, সেলভিন জাসি, অদিতি ঘোষ এবং সুনন্দনকুমার সেন।
পরিকল্পনামতো ওই পাঁচ জন নিজেরাই টাকা খরচ করে ছাপিয়েছেন পোস্টার। তাতে লেখা: ‘স্নাতক তো হলাম। এ বার? এমএ-তে পড়াই যেতে পারে ভাষাবিজ্ঞান’। সেই পোস্টার নিয়েই গ্রীষ্মের দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা গিয়েছেন কলকাতার কলেজে কলেজে, জানালেন বিভাগীয় প্রধান মীনাদেবী। সুনন্দনবাবু জানাচ্ছেন, তাঁরা স্কটিশ চার্চ, আশুতোষ, সেন্ট জেভিয়ার্স, মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র-সহ প্রায় দশটি কলেজে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। উদ্দেশ্য: ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃতের মতো ভাষা ও সাহিত্য বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে অনার্স পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের ভাষাবিজ্ঞান পড়তে আগ্রহী করে তোলা।
এই সেই পোস্টার।
কিন্তু কেন পড়বেন ভাষাবিজ্ঞান?
বিভাগের শিক্ষকেরা জানালেন, ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ যথেষ্টই। বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি-সহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় ভাষা সংস্থানের মতো সরকারি ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র, ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’, ‘স্পিচ সিন্থেসিস’ প্রভৃতি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনা সংস্থাতেও কাজ মিলতে পারে ভাষাবিজ্ঞান প়ড়ে। বিভাগ সূত্রে জানা গেল, তাদের ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে জার্মানিতে অভিধান তৈরির কাজেও যুক্ত।
এতই যদি কাজের সুযোগ থাকবে, তা হলে ভাষাবিজ্ঞানে ছাত্রছাত্রী নেই কেন, প্রশ্ন পড়ুয়াদের একাংশের।
প্রচারের অভাবে ভাষাবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ছেলেমেয়েরা তেমন ওয়াকিবহাল নন বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধারণা। তা ছাড়া তাঁরা আর যে-সব কারণের কথা বলছেন, তার মধ্যে আছে: l রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজির মতো বিষয়ে সম্প্রতি আসন বেড়েছে। বিভিন্ন কলেজে ওই সব বিষয়ে চালু হয়েছে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম। ফলে ওই সব বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা ভাষাবিজ্ঞানে আগ্রহ হারাচ্ছেন। l কয়েক বছর আগেই রাজ্যে ডব্লিউবিসিএসের মতো চাকরির পরীক্ষায় ভাষাবিজ্ঞানকে বিশেষ পত্র হিসেবে নেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সব কারণেই বিষয়টির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পোস্টার-পদক্ষেপের পরে সেই সংশয় কিছুটা কাটবে, আশাবাদী স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy