বোমা মিজান। নিজস্ব চিত্র।
অগস্টের তিন থেকে ছয় তারিখ, চার দিনে চার অভিযুক্ত জঙ্গিকে গারদে পুরল এনআইএ বা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার মধ্যে অন্যতম সেরা সাফল্য খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মূল চক্রী তথা জেএমবি জঙ্গি জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ওরফে কওসর ওরফে মুন্নার গ্রেফতারি।
দীর্ঘদিন তক্কে তক্কে থাকার পরে, ৩ অগস্ট কেরলের মালাপুরমের শ্রমিক মহল্লায় শিকে ছিঁড়েছিল তদন্তকারীদের বরাতে। জানুয়ারিতে বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের চক্রান্তে অভিযুক্ত এক বাংলাদেশি এবং মুর্শিদাবাদের এক জঙ্গির হদিস মেলে সেখানে। সেই সূত্র ধরেই আরও বড় সাফল্য পেলেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। কওসরকে সোমবার রাতে বেঙ্গালুরুর নিকটবর্তী ডেরা থেকে গ্রেফতার করেছেন তাঁরা। আর বেঙ্গালুরু ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ধরা পড়ে বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণ ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত আদিল ওরফে আসাদুল্লা। তার কাছে তিনটি মোবাইল, বাংলায় লেখা আইইডি তৈরির ফর্মুলা বা সূত্র এবং ব্যাঙ্কের নথি পাওয়া গিয়েছে।
কওসরকেও আপাতত বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণ ষড়যন্ত্র মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর এনআইএ বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ট্রানজ়িট রিম্যান্ডে পটনা নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এনআইএ-র খবর, বেঙ্গালুরুর কাছে মফস্সল শহর রামনাগরার একটি অতিথিশালায় ‘মুন্না’ নামে থাকছিল কওসর। তার হেফাজতে একাধিক মোবাইল, ল্যাপটপ এবং বিস্ফোরক পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা পুলিশের এসটিএফ বা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে কওসর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে এনআইএ। তবে সোমবার বেঙ্গালুরুর ‘অপারেশন’-এর খবর কাকপক্ষীও জানত না। এনআইএ-র লখনউ ইউনিট স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অভিযান সফল করেছে। কওসরের ঘনিষ্ঠ চার জন জঙ্গি শীঘ্রই ধরা পড়তে পারে বলে আশা করছে এনআইএ। বেঙ্গালুরু, তেলঙ্গানা, তিরুঅনন্তপুরমে স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে তাদের খোঁজ চলছে।
• বাংলাদেশে প্রধানত বোমা মিজান বা বোমারু মিজান বলেই কওসর পরিচিত।
• ২০০৯-এ মিরপুরে বাংলাদেশ পুলিশের ‘র্যাব’ প্রথম বার মিজানের বাড়িতে হানা দিয়ে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে। পরে ধরা পড়লেও পুলিশি হেফাজত থেকে পালায় সে।
• ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবি-র জঙ্গিরা কওসরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
• ২০১৪ সালের অক্টোবরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ। এই ঘটনার চাঁই ছিল সাড়ে পাঁচ ফুটের ৩৮ বছরের যুবক কওসর।
কওসরের নাম প্রথম উঠে আসে খাগড়াগড়-কাণ্ডে। পুলিশ প্রথমে ধরে নিয়েছিল, সে বীরভূম বা বর্ধমানের বাসিন্দা। পরে জানা যায়, সে বাংলাদেশি। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণে দু’জন মারা যান। অভিযোগ, প্রধানত বাংলাদেশে নাশকতা ঘটাতে খাগড়াগড়ে বোমা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিল মধ্য তিরিশের কওসরই। বোরখা তৈরির কথা বলে হাসান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির বাড়ির দোতলার অংশ ভাড়া নিয়েছিল সে। সেই তদন্তে কওসরকে পরে এ রাজ্যে আনা হতে পারে।
এনআইএ-র দাবি, খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় কওসর। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তার আনাগোনা বন্ধ করা যায়নি। কখনও কলকাতার উপকণ্ঠে মেটিয়াবুরুজে, কখনও বা হাওড়ায় কিংবা বসিরহাটে তাকে দেখা গিয়েছে। আবার কখনও গোয়েন্দাদের নেটওয়ার্কে ধরা পড়েছে, মুর্শিদাবাদে ঢুকে কয়েকটি জায়গায় কিছু তরুণের মগজধোলাইয়ের চেষ্টায় সে ব্যস্ত! গোয়েন্দাদের ধারণা, খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে পুলিশি ধরপাকড়ের জেরে জেএমবি-র কাজকারবার ধাক্কা খায়। নতুন করে সংগঠন ঢেলে সাজানোর চেষ্টায় ছিল কওসর। দলাই লামার বুদ্ধগয়া সফরের ঠিক আগে, ১৯ জানুয়ারি ছোটখাটো বিস্ফোরণ হয় সেখানে। কিছু বোমাও পাওয়া যায়। সেই ঘটনারর তদন্তে ফের কওসরের নাম উঠে আসে বলে জানায় এনআইএ।
বুদ্ধগয়া-কাণ্ডে় এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৩ অগস্ট মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন ওরফে শাহিন এবং আব্দুল করিমকে ধরে এনআইএ। তুহিন বাংলাদেশি হলেও দীর্ঘদিন ধরে বীরভূমে ছিল। করিম মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। এনআইএ জানায়, কওসরের নির্দেশে বুদ্ধগয়ায় বোমা রেখেছিল তারাই। কওসর ওরফে বোমা মিজান ধরা পড়ায় বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি কিছুটা ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সালাউদ্দিন সাহেলিন বা ‘বড় ভাই’ এখনও অধরা। সে ভারতেরই কোথাও লুকিয়ে আছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। এনআইএ সূত্রের খবর, কওসরকে নিয়ে খাগড়াগড়-কাণ্ডে ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হল। এ ছাড়া বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছে তালহা শেখ এবং হাতকাটা নাসিরুল্লা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy