নারদ কাণ্ডে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়ের মামলা শুরু হলে অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, হিসেব করে দেখা হবে অভিযুক্তের শেষ পাঁচ বছরের আয় কত আর সেই তুলনায় শেষ পাঁচ বছরে সম্পত্তি কত বেড়েছে।
নারদে ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে সিবিআই এবং ইডি। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল কলকাতায় এসে ‘সন্তোষ শঙ্করণ’ বলে পরিচয় দেন। কলকাতা ও রাজ্যে ব্যবসা করতে চেয়ে দেখা করেন রাজ্যের বহু প্রভাবশালীর সঙ্গে। অভিযোগ, তাঁকে ব্যবসায় ‘সুবিধে’ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অনেকেই তাঁর কাছ থেকে টাকা নেন।
এই তালিকায় তৃণমূলের সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক এবং পুলিশ অফিসারও রয়েছেন। টাকা দেওয়ার সময়ে গোপনে সেই ছবি তুলে রাখেন ম্যাথু। ২০১৬ সালে সেই ছবি নারদ চ্যানেলে সম্প্রচারও করে দেন। হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযুক্তদের নামে মামলা দায়ের করে সিবিআই ও ইডি। প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত প্রায় সকলকেই জেরা করে নিয়েছেন তদন্তকারীরা। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
তদন্তকারীদের মতে, প্রাথমিক তদন্তের পরে সিবিআই এ ক্ষেত্রে ডিএ (আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়) মামলার জন্য সুপারিশ করতে পারে আদালতে। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য খোঁজা হবে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ডিএ মামলা যদি ২০১৮ সালের অগস্টে (কাল্পনিক সময়) শুরু হয়, তা হলে ২০১৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত অভিযুক্তের কত টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ছিল তার হিসেব করা হবে। পাশাপাশি ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে সম্পত্তির হিসেব নেওয়া হবে।
এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এই সম্পত্তি মানে শুধু জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট নয়। এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত নগদ টাকা, স্থায়ী আমানতের মতো যাবতীয় প্রকল্পে রাখা টাকা, শেয়ার, গয়না। এমনকী, পাঁচ বছর আগে থাকা টিভির দাম যদি ১০ হাজার টাকা হয় এবং এখনকার টিভির দাম যদি ৫০ হাজার টাকা হয়, সেই ব্যবধানটাও ধরা হবে।’’ উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ধরা যাক গত পাঁচ বছরে এই সম্পত্তির ব্যবধানের পরিমাণ সব মিলিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা।
তদন্তকারীদের কথায়, এই সময়ের মধ্যে ওই অভিযুক্তের আয়ের পরিমাণ দেখা হবে। তার মধ্যে বেতন (এ ক্ষেত্রে মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক বা পুলিশ অফিসার হিসেবে) ছাড়াও রয়েছে বাড়ি ভাড়া থেকে আয়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি থেকে আয়, শেয়ার থেকে আয় বা অন্য আইনি পথে আয়। এক অফিসারের কথায়, ‘‘মাসে গড়ে ১ লক্ষ টাকা আয় ধরলে পাঁচ বছরে আয় হওয়ার কথা ৬০ লক্ষ টাকা। তার এক-তৃতীয়াংশ, ২০ লক্ষ টাকা ধরা হবে খাওয়া ও অন্য খরচ বাবদ। ‘প্রিভেনশন অব করাপশান’ আইনের পরিভাষায় একে ‘কিচেন কস্ট’ বলা হয়। বাকি থাকে ৪০ লক্ষ টাকা।’’
উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে এ ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে বলে ধরা হবে। এই ১০ লক্ষ টাকাই আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ব্যয়। সমপরিমাণ টাকা ব্যাঙ্কে থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। নয়তো প্রায় সমমূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পরে তা নিলাম করা হবে। এ কাজটি করবে ইডি।
আর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হবে কি না তা নির্ভর করবে ডিএ মামলায় কত অসঙ্গতি মিলছে, তদন্ত চলাকালীন তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করা হয়েছে কি না-সহ বেশ কিছু বিষয়ের উপরে। সে কাজটি করবে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy