Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

গাছ আর প্রজাপতি চড়ুইদের বাঁচানোর পাঠ স্কুলে

নিজের পরিবেশকে নিজেই চেনো। গাছ, লতা, চড়ুই, প্রজাপতিদের জীবনের সমস্যা বুঝে নিয়ে তাদের রক্ষা করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ো।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

নিজের পরিবেশকে নিজেই চেনো। গাছ, লতা, চড়ুই, প্রজাপতিদের জীবনের সমস্যা বুঝে নিয়ে তাদের রক্ষা করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ো।

স্কুলপড়ুয়াদের এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করতে চাইছে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর। নিজেকে সুস্থ ভাবে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদেই যে নিজের পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে চিনতে হবে এবং তাকে রক্ষা করতে হবে, সেই বোধ জাগানোর জন্য পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনতে চায় তারা।

মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবেশ রক্ষায় কী ভাবে সাহায্য করে এবং সেখানে অন্যান্য প্রাকৃতিক অবস্থার ভূমিকা কী, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে-কলমে তার পাঠ দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। এটা নতুন কোনও উপলব্ধি নয়। পরিবেশ সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের যাতে সম্যক জ্ঞান থাকে, তার জন্য সত্তর-আশির দশক পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে স্বাস্থ্য ও সাধারণ জ্ঞান বলে একটি বিষয় ছিলই। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যায়। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সম্প্রতি জাতীয় জীববৈচিত্র পর্ষদ (ন্যাশনাল বায়োডায়ভারসিটি অথরিটি)-এর তরফে স্কুলশিক্ষা দফতরকে বিষয়টি ফের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। পর্ষদ বলেছে, বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব সঙ্কটে। সেগুলিকে রক্ষা করার জন্য স্কুলের পড়ুয়াদের কাজে লাগানো যেতে পারে।

রাজ্যের সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার জানান, ইতিমধ্যেই তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে জীববৈচিত্রের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাতে দেওয়া আছে লুপ্তপ্রায় মাছেদের বিবরণও। স্কুলে নতুন ভাবে হাতে-কলমে পরিবেশের পাঠ শুরু হলে গোটা প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হবে।

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, প্রথম পর্বেই জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষামূলক ভ্রমণে। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চিড়িয়াখানা, বটানিক্যাল গার্ডেনের মতো বিভিন্ন জায়গায় যাবেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সেখানে নানা ধরনের জীবজন্তু ও পাখি এবং গাছগাছালি ও লতাপাতার সঙ্গে তাদের সরাসরি পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে কী ভাবে সেগুলিকে রক্ষা করা যায়, দেওয়া হবে তার পাঠ। বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, এই সমস্ত কর্মসূচির আয়োজন এবং পরিচালনা করবে স্কুল। নজর রাখবেন জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘গোটা জীবজগৎকে সঙ্কট থেকে বাঁচাতে এই ধরনের পদক্ষেপ খুবই ইতিবাচক।’’

শিক্ষা শিবিরের একাংশ বলছেন, স্কুল কবে ভ্রমণে নিয়ে যাবে, শুধু তার অপেক্ষায় না-থেকে ছাত্রছাত্রীরা হাতে-কলমে পরিবেশের পাঠ নেওয়াটাকে যাতে দৈনন্দিন জীবনযাপনের অঙ্গ করে তুলতে পারে, সেই ব্যাপারে উৎসাহ জোগাতে হবে। যেমন যেখানে চড়ুই পাখির থাকার জায়গা নেই, সেখানে তা তৈরি করতে হবে। ছোটরা যাতে প্রজাপতি বা ছোট কীটপতঙ্গ বাঁচানোটাকেও কর্তব্য বলে মনে করতে শেখে, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। নিয়মিত গাছ লাগানো, চারা গাছ রক্ষা করার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে তাদের। দূষণ প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, নিয়ম করে দিতে হবে সেই পাঠও।

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, জীবজগৎকে রক্ষা করার মন্ত্র স্কুল থেকেই শেখানো দরকার। সেই উদ্যোগে সমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ হবে। ‘‘ছোট বয়স থেকে পরিবেশ রক্ষার পাঠ দিলে গোটা সমাজ দীর্ঘ মেয়াদে তার ফল পাবে,’’ বলছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক পার্থিব বসু।

অন্য বিষয়গুলি:

Nature conservation Lesson School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE