দুই সিপিআই (এমএল) সমর্থক নিখোঁজের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল ধুবুলিয়ায়। রবিবার রাত থেকে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজ দু’জন হল ধুবুলিয়ার সোনাতলার বাসিন্দা ঝড়ু শেখ ও পাত্রদহ এলাকার মোজাম শেখ। রবিবার তাঁরা মোটর বাইকে চেপে চাপড়ায় এসেছিলেন। দুপুরে পরিবারের লোকের সঙ্গে মোবাইলে তাঁদের কথা হয়। সন্ধ্যায় চাপড়ার মুরগিহাটা এলাকায় তাঁদের শেষ বার দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে তাঁদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ দু’জনই তাদের সমর্থক বলে দাবি করেছে সিপিআই (এমএল)। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, ‘‘দু’জন ব্যক্তি নিখোঁজ আছেন। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিখোঁজ ঝড়ু শেখ দিনের বেশিরভাগ সময় ধুবুলিয়া থানায় থাকতেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, থানার পুলিশের হয়ে নানা কাজ করতেন তিনি। দিন তিনেক আগে ধুবুলিয়া এলাকা থেকে বছর দশেকের শিশুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। খোঁজ-খবর করে পুলিশ জানতে পারে, শিশুটির বাড়ি চাপড়ার ডোমপুকুর এলাকায়। রবিবার সকালে ঝড়ু শেখ শিশুটিকে নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে দুপুরে নিজের পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন ঝড়ু। সন্ধ্যায় চাপড়ার কয়েকজনের সঙ্গে তাঁকে ও মোজাম শেখকে মুরগিহাটায় একটি কলা বাগানের পাশে মদের ঠেকে দেখা যায়। রাতে চাপড়া থানার পুলিশের কাছে খবর আসে ওই মদের ঠেকের কয়েকজন দু’জনকে তুলে নিয়ে চলে গিয়েছে। তার পরেই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কিন্তু ঘটনার পর দিনও কারও সন্ধান পায়নি পুলিশ। ঝড়ু শেখের ভাইয়ের স্ত্রী পারভিনা বিবি ন’পাড়া-১ পঞ্চায়েতের সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সদস্য। তিনি বলেন, “আমার ভাসুর দিনের বেশিরভাগ সময়ে থানায় থাকতেন। পুলিশের নানা কাজ করে দিতেন। একটা বাচ্চাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চাপড়ায় গিয়েছিলেন। রাত থেকে সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।’’
সোমবার সকালে চাপড়ার বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় হাটখোলা ও রাজীবপুরের মাঝখানে ফাঁকা মাঠের পাশে ঝড়ু শেখের মোটর বাইকটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। রবিবার রাত থেকেই পুলিশের কাছে এক-এক বার এক-এক জায়গায় দু’জনের মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর আসতে থাকে। সে সব জায়গায় ছুটে গিয়ে পুলিশ কোনও মৃতদেহের সন্ধান পায়নি। তবে একেবারে সীমান্ত এলাকায় ঝড়ু শেখের মোটর বাইকটি পড়ে থাকা নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্ত পুলিশ। কারণ এই ঘটনার পিছনে প্রাথমিক ভাবে যে ক’জনের নাম পুলিশ জানতে পারছে তাদের মধ্যে এক জনের বাড়ি বাংলাদেশে। দুষ্কৃতীরা দু’জনকে অপহরণ করে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশে নিয়ে গেল না পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য সীমান্ত এলাকায় মোটর বাইকটা ফেলে রেখে গেল তা পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে। জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) অভিষেক মজুমদার বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমরা জানতে পারছি, পুরনো শত্রুতার জেরেই এই ঘটনা।’’
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যের কর্মিসভার দিন জলঙ্গির চরের জমি নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে খুন হয়েছিল সিপিআইয়ের (এমএল) ইউসুফ মোল্লা। লিবারেশনের জেলা কমিটির কমিটির সম্পাদক ও কৃষ্ণনগর লোকসভার প্রার্থী সুবিমল সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের দিনই আমাদের এক কর্মীকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে তৃণমূল। এ বারও আমাদের দুই সমর্থককে অপহরণ করে নিয়ে গেল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘হাস্যকর অভিযোগ। অস্তিত্বহীন একটি দলের লোককে অপহরণ করে সেই দলের গুরুত্ব তৈরি করে দেওয়ার মতো বোকা আমাদের কর্মীরা নন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy