শাসকদলের দাদাদের হুমকিতে মা ঘর ছেড়েছিল অনেক আগেই। ভাইও পড়াশোনা ছেড়ে কাজ নিয়েছে মুম্বইতে। বাবা পলাতক। মাস আটেক তিনি বাড়ি মুখো হননি।
কিন্তু সাহস করে বছর পনেরোর ললিতা খাতুন দাদুর বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা চালাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার গ্রামে ঢুকেছে সংবাদমাধ্যম। সাহসের সঙ্গেই ললিতা তার পরিবারের উপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরেছে। অভিযোগ, তারপর থেকে তার পরিবারের উপর হুমকির বহর বাড়তে শুরু করেছে। ওই দিন রাত থেকে সে-ও বাড়ি ছেড়েছে। আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মামার বাড়ি পাটুয়াভাঙা গ্রামে।
শুক্রবার বাপের বাড়ির বারান্দায় বসে ললিতার মা মনোয়ারা খাতুন জানালেন তাঁর পরিবারের দুরবস্থার কথা। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে আমার স্বামী তৃণমূলের হয়ে খেটেছিল, শাসকদলকে জিতিয়েছিল। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে উনি সিপিএম-এ নাম লেখান। তারপর থেকেই তৃণমূল আমাদের উপর অত্যাচার করছে।’’
রফিকুল অবশ্য এলাকায় ‘দাগী অপরাধী’ হিসেবে পরিচিত। পরিস্থিতি বুঝে দল পাল্টাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। পুলিশের খাতায় রফিকুলের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে। গত লোকসভা ভোটেই এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোয় অভিযোগে শাসকদল রফিকুল ও তাঁর বেশ কয়েকজন শাগরেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। বেশ কয়েক বছর আগে রফিকুল অতি-বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, মাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সময় রফিকুল বেশ কিছু নাশকতা ঘটিয়েছিল। সে সব মামলা এখন বিচারাধীন। তবে লোকসভা ভোটের পর রফিকুল পুলিশ ও শাসকদলের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দেয়। ভয়ে তাঁর স্ত্রী ও বাবা চলে যান। ছেলে কর্মসূত্রে থাকে রাজ্যের বাইরে। মেয়ে মাঝেমধ্যে মামার বাড়িতে গেলেও মূলত গ্রামেই থাকত। রফিকুলের মেয়ে ললিতার বক্তব্য, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম বাবার বিষয়টা নিয়ে তাপস পাল হয়ত ভাল কিছু বলবেন। তিনি আমাদের সকলকে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করবেন, উল্টে তিনি ১৪ জুন আমাদের উপর হামলা করতে বলেন।’’
তাপসবাবু সভা গরম করা বক্তৃতা দিয়ে গ্রাম ছাড়ার পরই ললিতার পরিবারের উপর আক্রমণ নেমে আসে বলে অভিযোগ। তাঁদের ঘর বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি টাকা-পয়সাও লুঠ করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। মনোয়ারা বিবির নালিশ, ‘‘পুলিশ, শাসকদলের লোকজন আমাদের ঘরছাড়া করল। পুলিশ খাঁচা ভেঙে গোটা দশেক মুরগিও নিয়ে যায়।’’বাপের বাড়ির বারান্দায় খেজুর পাতার তৈরি মাদুরে বসে গালে হাত দিয়ে এক নাগাড়ে মনোয়ারা বিবি জানালেন, তেঘড়িতে তাঁদের বিঘে পাঁচেক জমি রয়েছে। এক বিঘে জমিতে ধান লাগানো হলেও রফিকুলের অনুপস্থিতিতে সে ধান কাটার সামর্থ্য হয়নি। মাঠের ধান মাঠেই পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে। বিঘে চারেক জমিতে পাট বোনা রয়েছে। কিন্তু সে পাটের পরিচর্যা করার জন্য লোক লাগানোর ক্ষমতা পর্যন্ত নেই।
রফিকুলের পরিবার ভেবেছিল, গ্রামে দীর্ঘ দিনের বিবাদের একটা মীমাংসা করে দেবেন অভিনেতা-সাংসদ। কিন্তু হিতে বিপরীত হল তাপস পালের মন্তব্যের পর গ্রামের কাজিয়া আরও বাড়ল। শেষমেশ ঘরছাড়া হল রফিকুলের মেয়েও। বড় আন্দুলিয়া সারদামনি ইলা কন্যা বিদ্যাপীঠের ছাত্রী ললিতা বলেন, ‘‘সাংসদের বক্তব্যের পর স্কুলে যাওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, সেখানেও সহপাঠীদের বাঁকা নজর।’’
তবে রফিকুলের পরিবারের উপর অত্যাচার করা হয়নি বলে দাবি করেন তেঘড়ির বাসিন্দা তথা নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের পিন্টু প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘‘রফিকুলের জ্বালাতনে আমরা অতিষ্ঠ। পুলিশের খাতায় ওর নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ ওকে ধরতে গ্রামে গিয়েছিল। আমরা ওর পরিবারের উপর কোনও আক্রমণ করিনি।’’ ললিতারা কেন বাড়ি ছাড়া? জবাব দিতে পারেননি পিন্টু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy