পৌঁছে দিতে। করিমপুরে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
দুয়ারে পুজো। অথচ বাড়িতে সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে গেলেই ভ্যান চালকদের শুনতে হচ্ছে, “পুজোর সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার মিলবে তো?”
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ দুই জেলা জুড়েই গ্যাস নিয়ে একটা সঙ্কট চলছে। তাছাড়া প্রতি বছর পুজোর সময়ে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোঁরা, মিষ্টির দোকান, পুজো মণ্ডপ ও ক্যাটারার ব্যবসায়ীদের মধ্যে গৃহস্থালী সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ে বলে অভিযোগ। আর সেই কারণেই উদ্বিগ্ন গৃহকর্ত্রীরা। যদিও মুর্শিদাবাদ হোলসেল কনজ্যুমার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন, “পুজোর সময়ে বাড়ির গ্যাসের কোনও অভাব হবে না।”
যদিও রান্নার গ্যাস নিয়ে পড়শি জেলা নদিয়ার অবস্থা এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদের থেকে বেশি খারাপ। করিমপুর থেকে কল্যাণী, জেলা জুড়ে চলছে গ্যাসের জন্য হাহাকার। বুক করার এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মিলছে না গ্যাস। প্রতিবাদে কোথাও রাস্তা অবরোধ, কোথাও আবার এলাকার মানুষ গণস্বাক্ষর করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। কিন্তু কোনও প্রতিকার মেলেনি। অভিযোগ, দিনের পর দিন গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না অথচ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অটো কিংবা ছোট গাড়িতে দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে ডোমেস্টিক সিলিন্ডার।
মাজদিয়ার স্বপন ভৌমিক বলছেন, “আমরা যখন গ্যাসের জন্য স্থানীয় অফিসে যাচ্ছি তখন আমাদের বলা হচ্ছে, সরবরাহ কম থাকার কারণেই এই সমস্যা হচ্ছে। অথচ বাজারে এসে দেখছি চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মিষ্টির দোকান সবর্ত্র বাড়ির গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। কই সেখানে তো কোনও ঘাটতি নেই?” নদিয়া জেলা এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা বীরনগরের পুরপ্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই সমস্যা শুধু নদিয়া জেলায় নয়, গোটা পূর্ব ভারত জুড়েই একই অবস্থা। প্রয়োজনের তুলনায় সিলিন্ডার কম আসছে। এতে ডিস্ট্রিবিউটরদের কোনও হাত নেই।”
মুর্শিদাবাদেও বাড়ির গ্যাস যে খোলা বাজারে চলে যাচ্ছে সে কথা কবুল করছেন সব্যসাচীবাবুও। তিনি বলছেন, “সেই কারণে পুজোর অনেক আগেই বিভিন্ন হোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে কমার্শিয়াল গ্যাস সিলিন্ডারের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।” সেই সঙ্গে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারের কারচুপি রুখতে ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্তৃপক্ষও প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ কমার্শিয়াল গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার ব্যাপারেও নির্দেশ জারি করেছে। যদিও ওই সংস্থা ওই বিক্রি মাত্রা এখনও ছুঁতে পারেনি। গত মাসে যেমন সাড়ে তিনশো মত কমার্শিয়াল গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে পেরেছে তারা।
এ দিকে গত ২২ জুলাই থেকে অনলাইন বা এসএমএসে বুকিং শুরু হওয়ার পর থেকে একজনের সিলিন্ডার অন্য জনকে বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়ার প্রবনতাও আগের থেকে অনেক কমেছে। ওই প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ হোলসেল কনজ্যুমার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের পরিচালকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য সুকুমার অধিকারী বলেন, “এখন এসএমএসে সিলিন্ডার বুকিং শুরু হওয়ায় ভ্যান চালকদের গ্যাস নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠত, এখন তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।”
তবে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা কিন্তু কমছে না। কারণ নদিয়ার মতো মুর্শিদাবাদেও অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। যেখানে ১৯ কিলোগ্রাম কমার্শিয়াল গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১৬০৮ টাকা, সেখানে গৃহস্থের বাড়িতে ব্যবহৃত ১৪ কিলো ২০০ গ্রাম ওজনের ডোমেস্টিক গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৪১৯ টাকা ৫০ পয়সা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বাড়ির গ্যাস অন্য পথে বাজারে চলে এসে বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। অথচ প্রশাসনের সে বিষয়ে কোনও নজরদারি নেই গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার কিংবা পুলিশ-প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy