বছর দশেক আগে জল আসত নিয়ম করে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উদ্যোগেই বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা হত সালারে। এখনও সেই স্মৃতি বহন করে চলেছে পাইপ লাইন, জলের কলগুলি। কিন্তু জল আর আসে না। এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে নিজেদের বাড়িতে বসিয়ে নিয়েছেন নলকূপ। অনেককেই আবার ভরসা করতে হয় পঞ্চায়েতের নলকূপের উপর। অভিযোগ বারবার পঞ্চায়েত সমিতিতে অভিযোগ জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
সালার আদতে গ্রাম হলেও, সেখানে হাজার তিরিশ মানুষের বাস। ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় কুড়িটি পাড়া রয়েছে গ্রামটিতে। রেল যোগাযোগ থাকায় এখানকার বাজারও বেশ সমৃদ্ধ। সালারের পাইকারি ও খুচরো বাজারের উপরে নিভর্র করেন সালু, কান্দরা, টেঁয়া, কাগ্রাম, তালিবপুরের মতো দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। তাছাড়া ভরতপুর ১ নম্বর ব্লকের বহু মানুষও এই বাজারের আসেন। অথচ পানীয় জলের পরিষেবার অবনতি হচ্ছে ক্রমশ। ব্যবসায়ীরা পড়ছেন মহা বিপদে। গোটা বাজারে পানীয় জল পাওয়া দুষ্কর। সালারের বড় বাজার, আজমপাড়া, মহাজনপট্টি, মল্লিকপাড়া, শেখপাড়া, কুলুরি এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।
বাসিন্দাদের দাবি দশ বছর আগেও নিয়ম করে তিন বার পানীয় জল আসত এলাকায়। এই পরিষেবা দিত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর (পিএইচই)। কিন্তু ক্রমশ সেই পরিষেবা ব্যাহত হতে শুরু করে। তিন বারের বদলে কখনও দিনে একবার জল আসত। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে জল আসার নিয়মটাই উঠে গেল। অনেকে বুঝতেই পারতেন না কখন জল আসছে, আর কখন যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে এই ভাবেই পরিষেবা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এখন অনেক এলাকাতে জলই পৌঁছয় না বলে জানালেন তাঁরা। কুলুরি গ্রামের বাসিন্দা নূর হোসেন জানালেন, “গত পাঁচ বছর ধরে গ্রামে পানীয় জল প্রায় আসেই না। তবে পিএইচই-র পাইপ লাইন, জলের কল সবই রয়েছে। এখন ভরসা নলকূপ।” পার্থ মণ্ডল বলেন, “জল কখন আসে কখন যায় কেউ জানতেই পারে না। জেনে হবেই বা কী? এমন জল আসে যে তা মুখে দেওয়া তো দূরের কথা, অন্য কোনও কাজেও ব্যবহার করা যায় না।”
কিন্তু এক সময়ের চালু পরিষেবার হঠাৎ এমন দুর্দশা হল কেন? জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৫ সালে সালার এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের পরিষেবা দেওয়ার জন্য পাম্পসেট বসান হয়েছিল। প্রথম কুড়ি বছর ওই পাম্পগুলি থেকে ঠিকঠাক পানীয় জল উঠে পৌঁছেছে এলাকায়। কিন্তু পরবর্তী কালে ওই পাম্পগুলির পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। কারণ উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়নি পাম্পগুলির। সে বিষয়ে কোনও রকম উদ্যোগও দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের তরফে।
পানীয় জলের এমন বেহাল পরিষেবার কারণে বেজায় ক্ষুব্ধ সালার পঞ্চায়েত সমতির সভাপতি জহিরুদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে বহুবার জনস্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যাবস্থা না-নেওয়ায় বাসিন্দারা বঞ্চিত হচ্ছে। এবার আমি বিষয়টি জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও আমাদের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে জানাব।”এলাকায় পানীয় জলের বেহাল পরিষেবার কথা স্বীকার করে মুর্শিদাবাদ জেলার জনস্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক প্রদ্যুৎ দাস বলেন, “অকেজো পাম্পটি সংস্কার করে এলাকায় পানীয় জলের পরিষেবা যাতে সচল রাখা যায়, সেই চেষ্টাই করছি। দ্রুত পাম্পটি সংস্কারের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy