মূহ্যমান: মৃত সফিকুলের স্ত্রী (বাঁ দিকে) ও আত্মীয়েরা। নিজস্ব চিত্র
দিন কুড়ি আগে মুম্বই থেকে নিজের গ্রামে ফিরেছিলেন তিনি। কথা ছিল, খেত ও নতুন বাড়ির কাজ একটু গুছিয়ে নিয়ে তিনি ফের ফিরে যাবেন মুম্বইয়ে। তা আর হল না। শুক্রবার সকালে চাপড়ার মজফ্ফরের বাসিন্দা সফিকুল মণ্ডলের (২৪) দেহ মিলল বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে এলাঙ্গি গ্রামের খেতের ধারে। অভিযোগ, পাচারকারী সন্দেহে সফিকুলকে পিটিয়ে মেরেছে ৮১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের বিএসএফ।
সফিকুলের বাবা রমজান শেখ ভীমপুর থানায় খুনের মামলাও রুজু করেছেন। জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।” কৃষ্ণনগর সেক্টরের ডিআইজি ভবরলাল মিনার দাবি, “মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের কেউ এই ঘটনায় জড়িত নয়।”
সফিকুল বেশ কয়েক বছর ধরে মুম্বইয়ের একটি হোটেলে কাজ করেন। দিন কুড়ি আগে তিনি বাড়িতে ফিরেছিলেন। পৈতৃক বাড়ি সীমান্তের হাটখোলা গ্রামে কাঁটাতারের ওপারে। সম্প্রতি মুজফ্পরপুর গ্রামে জমি কিনে ঘর তৈরি করে সেখানে চলে এসেছেন সফিকুল ও তাঁর দাদা রবিউল।
রবিউল বিঘে দু’য়েক জমিতে ভাগচাষ করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝড় শুরু হলে দুই ভাই সেই মাঠে যান কাটা ধান গুছিয়ে রাখার জন্য। অভিযোগ, সেই সময় বিএসএফের জওয়ানেরা এসে তাঁদের উপরে চড়াও হয়। গরু পাচারকারী সন্দেহে সফিকুলকে মারধর করে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে রবিউল পালিয়ে এলেও সফিকুলকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।
বাড়ি ফিরে বিষয়টি তিনি সবাইকে জানান। রাতে খোঁজাখুঁজি করেও সফিকুলের সন্ধান মেলেনি। শুক্রবার সকালে এলাঙ্গিতে খেতের পাশে তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ছুটে যান তাঁর পরিবারের লোকজন। রবিউলের অভিযোগ, বিএসএফ মেরে সফিকুলের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে।
বছর চারেক আগে এলাঙ্গির বাসিন্দা রূপার সঙ্গে বিয়ে হয় সফিকুলের। তাঁদের এক কন্যাসন্তানও আছে। স্বামীর মৃত্যর খবর পেয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন রূপা। এ দিন কোনও রকমে তিনি বলেন, ‘‘বিনা কারণে লোকটাকে বিএসএফ মেরে ফেলল গো!’’
পুলিশ ও বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সীমান্তের এই এলাকা দিয়ে একসময় ব্যাপক চোরাচালান চলত। এখন সেই কারবার অনেক কমে গেলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। তাই বলে সফিকুল? মানতে চান না গ্রামের মানুষ। রমজানও বলছেন, ‘‘পাচারে থাকবে না বলেই তো ছেলেটা সেই কবে মুম্বইয়ে চলে গিয়েছিল। আর তাকেই কি না শুধু সন্দেহের বশে বিএসএফ খুন করল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy