নিহত শান্তনু শীলের স্ত্রী সোমা ও ছেলে সৌম্যজিৎ। নিজস্ব চিত্র
কী ভাবে সকলের চোখের সামনে তাঁর স্বামীকে গুলি করে মারা হয়েছিল, সেখানে কে কে ছিল, কে কী বলেছিল— গোপন জবানবন্দিতে বিচারককে জানিয়ে এলেন চাকদহে নিহত শান্তনু শীলের স্ত্রী সোমা।
শুধু তিনি নন, সঙ্গে ছিল তাঁর দশ বছরের ছেলে সৌম্যজিৎও। সোমবার বিকেলে এক বার আলাদা করে, এক বার এক সঙ্গে মা-ছেলের জবানবন্দি নেন কল্যাণী আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রামপদ ঘোষ। পরে সোমা বলেন, ‘‘সে দিন যা ঘটেছিল, সবটাই ওঁকে জানিয়ে এসেছি। এক বর্ণ মিথ্যে বলিনি, কিছু গোপনও করিনি।’’
সাত দিন পুলিশ হেফাজতের পরে আজ, মঙ্গলবার খুনে প্রধান অভিযুক্ত অমন রায় ওরফে কালুকে আদালতে হাজির করানোর কথা। পুলিশ আর রাখতে না চাইলে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হতে পারে। কিন্তু তার সঙ্গী চার অভিযুক্ত এখনও অধরা। যে পাইপগান দিয়ে গুলি করা হয়েছিল, সেটাও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তাদের ‘ভূমিকা’ এবং ‘দক্ষতা’ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। সে ক্ষেত্রে, ‘তদন্তের স্বার্থে’ কালুকে ফের পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় কি না, সেটাও দেখার।
গত ১২ জানুয়ারি রাতে চাকদহের কেবিএম এলাকায় জলসা চলাকালীন যখন মঞ্চেই শান্তনুকে গুলি করা হয়, ছেলেকে নিয়ে সামনেই বসেছিলেন সোমা। লিখিত অভিযোগে তিনি কালু ছাড়াও তার দাদা সুমন রায়, বিশ্বনাথ দেবনাথ, বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং গৌতম মণ্ডলের নাম দিয়েছেন। তারা ছাড়াও কয়েকটি অল্পবয়সি ছেলে ছিল বলে সোমা পুলিশকে জানিয়েছেন, যদিও তাদের তিনি চিনতে পারেননি।
তোলাবাজি ও নানা দুষ্কর্মের জন্য কুখ্যাত কালু ও তার সঙ্গীরা পুরপ্রধান দীপক চক্রবর্তীর মদতে পুষ্ট বলে ধারণা চাকদহের অনেকেরই। দীপক নিজে স্থানীয় কাউন্সিলর। কিন্তু তিনি শান্তনুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। বরং অভিযুক্তদের পরিবারের সুরে দাবি করে আসছেন, চার জনের সকলে খুনে জড়িত নয়, ঘটনাস্থলেই ছিল না। যা আসলে কার্যত সোমাকে ‘মিথ্যাবাদী’ তকমা দেওয়ার সামিল।
কাজেই এ দিন সোমার দায় ছিল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে নিজের সব কথা উজাড় করে বলার। সকালেই তিনি ছেলেকে নিয়ে চাকদহ থানায় চলে আসেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাই নীলাদ্রি দাস। পুলিশ তাঁদের নিয়ে যায় কল্যাণী। তার পর সারা দিন অপেক্ষা। পুলিশ দুপুরে খাওয়ার কথা বললেও সোমা রাজি হননি। জানান, আপাতত বাইরে খাচ্ছেন না। সারা দিন বিস্কুট খেয়েই কেটেছে। সন্ধ্যায় বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘চোখের সামনে লোকটাকে খুন করা হল। সত্যিটা না জানিয়ে স্বস্তি পাব কী করে?’’
চাকদহ থানা সূত্রের খবর, খুনের অস্ত্র এবং ফেরারদের খোঁজে কালুকে সঙ্গে নিয়ে বারবার হানা দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই পুরপ্রধানের চেয়ে পৃথক সুরে কথা বলছিলেন জেলা তৃণমুল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। এ দিনও তিনি বলেন, “বাঁদরামি মানা হবে না। সকলকেই গ্রেফতার করতে হবে। কোনও দ্বিমত নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy