দোকানের বাইরে সাজানো হেলমেট তুলে নেওয়ার মুহূর্ত। —নিজস্ব চিত্র।
সবে মাত্র দোকান খুলেছিলেন দোকানি। এমন সময় একটি বাইক এসে থামে দোকানের সামনে। হাতে পদ্ম-পতাকা নিয়ে এক যুবক বাইক থেকে নেমে দোকানিকে অনুরোধ করেন দোকান বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। দোকানিও তাঁকে কিছু কথা বলছিলেন। সেই সময়ে আচমকাই জনা দশেকের একটি দল হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে সেই দোকানে। তার পরেই শুরু হয় লুটপাট! দোকানের বাইরে সাজানো হেলমেট তুলে নিতে থাকেন একে একে। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে পদ্ম-পতাকা। কী করবেন বুঝতে না পেরে অসহায় দোকানি তখন হাতজোড় করে তাঁদের কাছে অনুরোধ করেন হেলমেট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা! বুধবার বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধের দিনে এই ভিডিয়ো ঘিরে তোলপাড় হল সমাজমাধ্যম।
আনন্দবাজার অনলাইন পরে ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে এলআইসি অফিসের ঠিক উল্টো দিকে মোটরবাইকের হেলমেট, স্পেয়ার পার্টস ও ব্যাটারির দোকান রয়েছে ইন্দ্রপ্রস্থের বাসিন্দা সনজিৎ মণ্ডলের। প্রশাসনের আশ্বাসে সকালে দোকান খুলেছিলেন তিনি। তার পরেই তাঁর দোকানে ওই ঘটনা ঘটে। পরে আনন্দবাজার অনলাইন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করে। সনজিৎ জানান, দোকান খোলার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিজেপির একদল কর্মী-সমর্থক তাঁর দোকানে হাজির হন। তাঁরা দোকান বন্ধ করতে বলায় তিনি তা-ই করছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর দোকান থেকে হেলমেট তুলে নিচ্ছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। দোকানির অভিযোগ, যাঁরা তাঁর দোকানে ঢুকেছিলেন, তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিজেপির মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার। তিনিই দলীয় কর্মীদের হাতে হেলমেট তুলে দিচ্ছিলেন। যদিও সনজিৎ জানান, তাঁর দোকানের কোনও হেলমেটই চুরি যায়নি। পরে সব ক’টি হেলমেট তিনি পেয়েও গিয়েছিলেন। দোকানির কথায়, ‘‘দোকানে সামান্য বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। তবে বেশি কিছু হয়নি। কোনও কিছু খোয়া যায়নি। যেটুকু এ দিক-ও দিক হয়েছিল, সব ফেরত পেয়েছি।’’
শাখারভ বলেন, ‘‘আজকের মতো স্পর্শকাতর দিনে একটু গন্ডগোল হবেই। এটা কাম্য। তবে যে দোকানদার আজ দোকান খুলেছেন, এটা তাঁর দায়িত্ব। দোকান বন্ধ নিয়ে গন্ডগোল হয়েছে ঠিকই, তবে হেলমেট চুরির কোনও প্রশ্নই নেই। ওই দোকানদারের থেকে এক টাকা হলেও বেশি রোজগার করি।’’ ঘটনাচক্রে, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাখারভকে আটক করেছিল পুলিশ। যদিও পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদে সব মিলিয়ে বুধবার ১৫ জনকে আটক করেছিল পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy