n শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে মহিলা। নিজস্ব চিত্র
প্ল্যাটফর্মে বসে মাঝবয়সি এক মহিলা। পরনে লাল রঙের ময়লা পোশাক। মুখ ফুলে গিয়েছে। জটাপড়া উস্কোখুস্কো চুল। দুর্গন্ধে ধারে কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ ধুবুলিয়া স্টেশনে ওই দৃশ্য দেখে মহিলাকে সাহায্য করতে উদ্যোগী হন পেশায় শিক্ষক নন্দদুলাল ঘটক। তাঁর এবং আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার চেষ্টায় এ দিন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছে ওই মহিলার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালগোলা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার সকাল ৭ টা ১৪ নাগাদ ধুবুলিয়া স্টেশন ছাড়ার পর ১ নম্বর প্লাটফর্মের মাঝামাঝি এক জায়গায় দেখা যায় ওই মহিলাকে। নন্দদুলাল ফোন করে খবর দেন ধুবুলিয়া রেল বাজারের বাসিন্দা লক্ষ্মণ ব্রহ্মকে। পেশায় অঙ্কন শিক্ষক লক্ষ্মণের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে পৌঁছে যান স্থানীয় বাসিন্দা বাবুলাল দেবনাথ ও পলাশ বিশ্বাস।
তাঁরা স্টেশনে পৌঁছে মহিলার কাছে গিয়ে দেখেন, তাঁর মাথা দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত রস গড়াচ্ছে। তাতে মাছি বসছে। দেরি না করে নাপিত ডেকে প্রথমে চুল কেটে ফেলা হয়। মাথা ন্যাড়া করতেই বোঝা যায় পোকায় (ম্যাগট) মাথার অনেকটা খুবলে খেয়ে নিয়েছে। তাঁদের ধারণা, মহিলাকে রাস্তায় ফেলে গিয়েছেন তাঁর বাড়ির লোকজন। মহিলাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন আশপাশের লোকেরাও। ট্রেনের ফেরিওয়ালা মিঠুন মণ্ডল, লক্ষ্মণ প্রাথমিক ভাবে সেই ক্ষত পরিষ্কার করে কিছু পোকা বের করে একটা ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন। তারপর তাঁকে ধুবুলিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। মিঠুন, লক্ষ্মণরা জানান, ওই মহিলা কথা বলতে পারছিলেন না। প্রথমে যন্ত্রণায় শুধুই কাঁদছিলেন, পরে কিছু পোকা পরিষ্কার করার পর চুপ করে যান। অভিযোগ, ধুবুলিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র মহিলার কোনও চিকিৎসাই করেনি। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরে চিকিৎসক এসে মহিলাকে দেখেই তাঁকে কৃষ্ণনগরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেই মতো অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে লক্ষ্মণরা তাঁকে নিয়ে সোজা শক্তিনগর জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। মহিলাকে নিয়ে যখন তাঁরা এমার্জেন্সিতে ঢুকছিলেন, সে সময় ডিউটি শেষ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন হাসপাতালের এক্সরে টেকনিশিয়ান তাপস দেব। দাঁড়িয়ে যান তিনিও। শেষপর্যন্ত ওই যুবকদের সঙ্গে থেকে মহিলার প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি যান তিনি। তাপস বলেন, ‘‘মহিলাকে দেখে ভীষণ মায়া হল, ওঁদের কাছে শুনলাম ওঁকে কেউ ফেলে গিয়েছে। মানুষ কী করে এত নিষ্ঠুর হয় বুঝি না।’’ ধুবুলিয়ায় বাড়ি ফেরার সময় মিঠুন বলেন, ‘‘আর ব্যবসা হল না, তাতে কোনও আক্ষেপ নেই। মহিলা সুস্থ হয়ে উঠুন, এটাই চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy