এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুনের দায়ে দু’জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিল রানাঘাট আদালত। শনিবার অতিরিক্ত জেলা জজ সৌমেন গুপ্ত দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৭৬ ডি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে কারাবাসের নির্দেশ দেন বিচারক। ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছ’মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের ১৮ মে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছিল। রানাঘাট থানা এলাকায় রেললাইন সংলগ্ন পাড়ায় ওই বৃদ্ধা একাই থাকতেন। একমাত্র মেয়ের শ্বশুরবাড়ি বৃদ্ধার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই। ঘটনার দিন সকালে ওই বৃদ্ধার মেয়ে এসে দেখেন, ঘরের দরজা খোলা। মেঝেতে অর্ধনগ্ন অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধা মা। তাঁর সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, ওই বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে মৃতার মেয়ে রানাঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে শুভঙ্কর শিকদার এবং তনু সরকার নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধ করার পর শুভঙ্কর এবং তনু মুম্বই পালিয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে তারা নেপালে পালানোর ছক কষেছিল। সেই বিষয়ে কথা বলতে রানাঘাটে এক পরিচিতের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই দু’জন। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ মুম্বইয়ে হানা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী মিলনকুমার সরকার বলেন, ‘‘বৃদ্ধা রাতে শৌচালয় যাওয়ার জন্য ঘরের দরজা খুলেছিলেন। সেই সুযোগেই ঘরে ঢুকে পড়ে শুভঙ্কর এবং তনু। এর পর জোর করে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে তারা। ওই বৃদ্ধার মেয়ে যখন সকালে মায়ের খোঁজ নিতে আসেন, তখন ওই দু’জনকে উনি দেখতে পান। কোনও মতে নিজেদের জামাকাপড় পরতে পরতে বেরিয়ে আসছিল তারা। সেই মামলার শুনানিতে একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু করা হয়েছিল। শুক্রবার বিচারক সৌমেন গুপ্ত তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন। শনিবারই তাদের যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দেন।’’
রানাঘাটের এসডিপিও সবিতা গটিয়াল বলেন, ‘‘আমরা যে কোনও অপরাধের বিরুদ্ধেই সক্রিয় অবস্থান নিচ্ছি। এই জানুয়ারি মাসেই আমরা তিনটি মামলার বিচার আদালতের কাছ থেকে পেয়েছি। শুধু চার্জশিট দিয়ে থেমে যাওয়া নয়, মামলার অগ্রগতির উপর নজর রেখে কাজ করা, সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও একাধিক কারণে সাফল্য পাচ্ছে রানাঘাট পুলিশ জেলা।’’
দোষীদের আইনজীবী বাসুদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা হাতে অর্ডার কপি পাইনি। কপিতে কী রয়েছে, তা দেখে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’’