ফাইল চিত্র।
মন্দির চত্বর শুনশান। জনমানবহীন অতিথিশালার টানা বারান্দা খাঁ খাঁ করছে। নাটমন্দিরে ঘুরে বেড়ানো গুটিকয়েক লোক দেখে ভাবাই যাচ্ছে না মাস দেড়েক আগে দোলের সময় লাখো মানুষের ভিড় উপচে উঠেছিল। ইস্কনের বুকিং অফিসে নিশ্চিন্তে বসে হরিনামের মালা জপছেন কর্তব্যরত নবীন বাবাজি।
নবদ্বীপের জন্মস্থান মন্দির বা ধামেশ্বর মন্দিরে এক মনে নাম করে চলেছেন প্রবীণ বৈষ্ণব। তপোভঙ্গ করার জন্য নেই কোনও যাত্রী! প্রবল গরমে এমনই ছবি নবদ্বীপ বা মায়াপুরের সদা ব্যস্ত মন্দিরগুলিতে।
বৈশাখ মাস পড়তে নবদ্বীপ বা মায়াপুরের বেশির ভাগ মঠমন্দিরে পর্যটকের ভিড় কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি পার করতেই বিলকুল ফাঁকা বিষ্ণুপ্রিয়ার ভিটা থেকে বেথুয়াডহরির বন। এমনিতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গরমের এই দু’মাস নবদ্বীপ বা মায়াপুরের ক্ষেত্রে ‘অফ সিজন’ বলেই ধরা হয়। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অস্বাভাবিক দাবদাহ।
নবদ্বীপের ধামেশ্বের মহাপ্রভু মন্দিরের পরিচালন সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, “এখন সারাদিনে মেরেকেটে দেড়শো থেকে দু’শো পর্যটক আসছেন। অথচ কয়েক দিন আগেও সকাল থেকে রাত যাত্রীবাহী টোটোর ভিড়ে আমাদের চলাচল করা দায় হয়ে উঠেছিল। ভিড়ের চাপ এক এক সময় নেওয়া যাচ্ছিল না। এখন দিনে খান
পঞ্চাশেক টোটো আসছে কি না সন্দেহ। গত এক সপ্তাহে যেন সেই করোনা কালের ছবি।”
নবদ্বীপের চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈত দাস বলেন, “দিন সাতেক ধরে বাইরের মানুষের যাতায়াত একেবারে কমে গিয়েছে। সামনেই অক্ষয় তৃতীয়া, চন্দনযাত্রা। এই আবহাওয়া চলতে থাকলে জন সমাগম হবে না। ভক্ত সমাগম না হলে মন্দিরের প্রতিদিনের সেবার খরচ সঙ্কুলানে সমস্যা হবে।”
অন্য দিকে, ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিকগৌরাঙ্গ দাস বলেন, “চোখে পড়ার মতো কমেছে পর্যটকের ভিড়। মায়াপুরের মন্দিরে গড়ে ৫০ হাজার মানুষ সাধারণ দিনে ভোগের কুপন কাটেন। এখন সেই সংখ্যাটা কমে ১০ হাজারের আশেপাশে রয়েছে। গরমে এবং রোদে মানুষ পথে বার হচ্ছেন না। এই আবহাওয়া বেড়ানোর মতো নয়। কয়েকশো ছোট গাড়ি এবং বাসে ভর্তি থাকতো আমাদের পার্কিং লট। এখন সেখানে হাতে গোনা গাড়ি। বৃষ্টি না-পড়া পর্যন্ত এমনই চলবে। তবে স্কুলে গরমের ছুটি এগিয়ে আসায় একটু গরম কমলেই এই অবস্থা কেটে যাবে।”
ফাঁকা পড়ে আছে হোটেল থেকে ধর্মশালা। মায়াপুর হোটেল মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপকুমার দেবনাথও জানান, গরমের জন্যই সব ফাঁকা। এখন আর হোটেলে তেমন ভিড় জমবে না। আবার সেই রথের অপেক্ষা। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির তরফেও জানানো হয়েছে অন্য সময়ের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ পর্যটকও এখন নেই। যাঁরা যাতায়াত করেছেন তাঁদের সিংহভাগই আশপাশের এলাকার নিত্যযাত্রী বা স্থানীয় মানুষ। সকলেই এখন অপেক্ষায় কবে বৃষ্টির পথ বেয়ে ভক্তেরা ফিরে আসবেন মন্দিরে। অতিথি আবাস ভরে উঠবে চেনা কোলাহলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy