রায়গঞ্জে জেল-মাজদিয়ায় বেল!
বছর আড়াই আগের চালু লব্জটা ভোটের পরেও যে ইতিউতি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, ধুলিয়ানের অজ এক পাড়ার ঘটনার সূত্রে তা আরও এক বার ধরিয়ে দিচ্ছেন বিরোধীরা।
তবে রায়গঞ্জের মতো জামিন যোগ্য নয়, ধুলিয়ানের ঘটনায় শাসক দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারাতেই মামলা করেছিল পুলিশ। কিন্তু, শুক্রবার জঙ্গিপুর আদালতে তাদের তোলা হলে, আদালত ধৃত দশ তৃণমূল কর্মীকেই জামিন দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
অধ্যক্ষ পিটিয়ে দিব্যি বেল পেয়ে শাসক দলের নেতারা সে বার দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন রায়গঞ্জ শহর। অন্য দিকে নিতান্তই ‘লঘু পাপে’ মাজদিয়া কলেজের এসএফআই ছাত্রদের কপালে জুটেছিল জেলহাজত। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের এক নেতা তাই মনে করছেন— ‘‘পুলিশ পিটিয়ে, গাড়ি ভাঙচুর করেও তৃণমূলের দশ কর্মী অনায়াসে জামিন পেয়ে যাওয়ায় রায়গঞ্জের সেই স্মৃতিই উস্কে দিচ্ছে।’’
পুলিশ জানাচ্ছে, জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হলেও এ দিন জঙ্গিপুর আদালতে সরকারি আইনজীবীই হাজির ছিলেন না। আর সে জন্যই বেকসুর জামিন মিলেছে অভিয়ুক্তদের।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ জানাচ্ছে, ওই দিন সন্ধ্যায় সাব ইনস্পেক্টর ইন্দ্রনীল মোহান্তর নেতৃত্বে পুলিশ গিয়েছিল ধুলিয়ানের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। লক্ষ্য ছিল মদের ঠেকভাঙা। পাড়ারই এক মদ্যপ যুবককে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। তার জেরেই ছড়িয়েছিল উত্তেজনা। শুরু হয় বচসা। ক্রমে তা হাতাহাতিতে গড়ায়। সেই সময়েই পুলিশ কর্মীদের নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। এই হট্টগোলের মধ্যেই পালিয়ে য়ায় গ্রেফতার হওয়া ওই মদ্যপ যুবক।
পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে শুনে থানা থেরে বড়সড় বাহিনী আসে এলাকায়। তৃণমূলের অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের না পেয়ে নির্বিচারে এলাকায় লাঠিচার্জ শুরু করে। গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের, আদতে তারাও পাড়ার নিতান্তই ‘নিরীহ’ ছেলে বলেই দাবি তৃণমুলের।
এরপরই রাতে কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক হাজির হয়ে ধৃতদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে সামশেরগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। থানায় ইট-পাটকেল ছোঁড়া হয়।
খবরর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন এলাকার তৃণমূল নেতারা। স্থানীয় নেতা, প্রাক্তন ব্লক সভাপতি কাওসার আলি বলেন, “পুলিশ যাদের ধরেছে তারা সম্পূর্ণ নিরপরাধ। তবু তাদেরকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে।’’
পুলিশের উপরে চড়াও হওয়ায়, সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায়, বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করে ধুলিয়ানের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘরি পল্লির দশ তৃণমূল কর্মীকে। ধৃতদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার গোলহম্মদ ছাড়া ছিলেন ওয়ার্ডের পরিচিত তৃণমূল কর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর, পুলিশকে নিগ্রহ করার (৩৪১, ১৮৬, ৩৩২, ৩৫৩, ৪২৭, ৩৪ আইপিসি ছাড়াও ৩/৪ পিডি পিপি) অভিযোগ এনে মামলা রুজু করেছিল পুলিশ।
পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন,“ধৃতেরা কোন দলের তা আমাদের দেখার দরকার নেই। পুলিশকে নিগ্রহ ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় গ্রেফতার হয়েছে দশ০ জনকে।’’
ধৃতদের থানায় নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাতেই শ’তিনেক তৃণমূল সমর্থক চড়াও হয় সামশেরগঞ্জ থানায়। পুলিশ অবশ্য তাদেরও রেয়াত করেনি। শুক্রবার দুপুরে তাদের হাজির করানো হয়েছিল জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে।
কিন্তু আদালতে এ দিন হাজির ছিলেন না কোনও সরকারি আইনজীবী। ধৃতদের হয়ে জামিনের জন্য আদালতে সওয়াল করেন জঙ্গিপুর বার অ্যাশোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ জাহাঙ্গির। সরকারি আইনজীবী না থাকায় কার্যত বিনা বাধায় ধৃতরা প্রত্যেককেই ৬০০ টাকার ব্যক্তিগত বেল-বন্ডে অস্থায়ী জামিন মঞ্জুর পেয়ে গিয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে রাত ১০টা নাগাদ সামশেরগঞ্জ থানায় ছুটে যান জঙ্গিপুরের মহকুমা পুলিস অফিসার পিনাকী দত্ত। সঙ্গে আসেন জঙ্গিপুরের সিআই, ফরাক্কার আইসি, সুতির ওসিরাও। তৃণমূলের পুরপ্রধান সহ এলাকার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে এ বার বৈঠকে বসেন এসডিপিও-সহ পদস্থ পুলিশ কর্তারা। আলোচনা চলার মাঝেই থানায় ফের ঢিল ,পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। উত্তেজিত পুলিশ অফিসারেরা এরপরই আলোচনা ছেড়ে উঠে উপস্থিত তৃণমূল নেতাদের জানিয়ে দেন, ধৃতদের কাউকেই ছাড়া হবে না । তারা যা ঘটিয়েছে সেই মর্মে এফআইআর রুজু করে সকলকেই জঙ্গিপুর আদালতে পাঠানো হবে। এরপর গভীর রাত্রে কড়া পুলিশ পাহারায় ধৃতদের সকলকে সামশেরগঞ্জ থানা থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখা হয় রঘুনাথগঞ্জ থানার লকআপে। সেখান থেকেই তাদের শুক্রবার জঙ্গিপুর আদালতে হাজির করা হয়।
জঙ্গিপুরের এসডিপিও পিনাকি দত্ত বলেন, ‘‘পুলিশকে নিগ্রহ, পুলিশের কাজে বাধা, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের সব ধারাতেই মামলা রুজু হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুটি ধারা জামিন অযোগ্য। তা সত্বেও ধৃতদের জামিন দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে আদালতের বিষয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy