Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মেলেনি ‘পাখির’ পোশাক, অভিমানে আত্মঘাতী মেয়ে

মেয়ের আবদার ছিল সিরিয়ালে দেখা ‘পাখি’র মত পোশাকের। সাধ থাকলেও দেড় হাজার টাকার সেই পোশাক কেনার সামর্থ্য ছিল না বিধবা মায়ের। মঙ্গলবার সকালেই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা কথা দিয়েছিলেন পরের ঈদে যে করেই হোক ওই পোশাক কিনে দেবেন। পরের ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি অবুঝ মেয়ে! মঙ্গলবার মায়ের উপরে অভিমানে বাড়িতে রাখা কীটনাশক খায় আফরিন খাতুন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

মেয়ের আবদার ছিল সিরিয়ালে দেখা ‘পাখি’র মত পোশাকের। সাধ থাকলেও দেড় হাজার টাকার সেই পোশাক কেনার সামর্থ্য ছিল না বিধবা মায়ের। মঙ্গলবার সকালেই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা কথা দিয়েছিলেন পরের ঈদে যে করেই হোক ওই পোশাক কিনে দেবেন।

পরের ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি অবুঝ মেয়ে! মঙ্গলবার মায়ের উপরে অভিমানে বাড়িতে রাখা কীটনাশক খায় আফরিন খাতুন। সাগরদিঘি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পথে মায়ের কোলেই মৃত্যু হয় বছর তোরোর মেয়ের। ঈদের তিন দিন আগে এই মৃত্যুতে নবগ্রামের নিমগ্রামে শোকের ছায়া নেমেছে। মামা এজারুল শেখের আক্ষেপ, ‘‘এক রত্তি মেয়েকে বুক আগলে রেখেছিলেন মা। অভাবের সংসারে কোনও রকমে দিন চলে যেত মা ও মেয়ের। তবু মেয়েকে কষ্ট বুঝতে দেননি সে ভাবে। মেয়েই মায়ের কষ্টটা বুঝল না!’’ অভিমানের সুরে তিনি বলেন, ‘‘টিভিতে দেখা সিরিয়ালের পোশাকটাই ওর কাছে বড় হল!’’

মা মহিদুর জাহান বেওয়া জানালেন, বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। তাই মেয়ে প্রায় প্রতিদিনই পাশের বাড়িতে টিভি দেখতে যেত। এসে সিরিয়ালের গল্প শোনাতো। কার পোশাক কেমন, কাকে কেমন মানিয়েছে বড় মুখ করে বলত সে সব কথা। তিনি বলেন, ‘‘ওর প্রিয় নায়িকা ছিল পাখি। প্রিয় ছিল তারই পোশাক। বহুদিন বলেছে ওর মতো শালোয়ার কামিজ কিনে দেবে? বলতাম ঈদ আসুক দেব। একদিন গিয়েও পাশেরই এক দোকানে নিয়ে গিয়েছিলাম। পোশাকের দাম শুনে সাধ্যে কুলোয়নি।’’ তার পরিণতি যে এমন হবে, ভাবতে পারননি তিনি। পাশেই বাড়ি খুড়তুতো দাদা নেকবর শেখের। তিনি প্রায়ই বুঝিয়ে বলতেন এমন বায়না কি ঠিক? তাঁর কথায়, ‘‘কথা ঘুরিয়ে দিয়ে আফরিন বলত তুই মেয়েদের পোশাকের কি বুঝিস?’’

গ্রামের শিক্ষক আবদুল হক মনে করেন টিভি সিরিয়ালের কু-প্রভাব গ্রামের ছোটো ছেলেমেয়েদের উপরে পড়ছে। সিরিালের দৌলতে বাড়ছে চাহিদা। বহু পরিবারের ছোটো ছেলেমেয়েরা পোশাক, খাবার, চুলের ছাঁট বদলে ফেলছে টিভির সিরিয়াল দেখে। যে স্কুলে আফরিন দু’বছর আগে পড়ত সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ গিয়াসুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে যা ঘটেছে, তা আজ আমাদের পরিবারে ঘটবে না তা হলফ করে কেউ কী বলতে পারে!’’ সাগরদিঘি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ি মনে করেন, ‘‘বয়ঃসন্ধির সময়টা অভিভাবকদের বাড়তি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE