শুভেন্দু অধিকারী। রানিনগরে।
ইঙ্গিত ছিল বিরোধী দলের তাবড় বেশ কয়েক জন নেতা তৃণমূলে যোগ দেবেন। কিন্তু রবিবার রানিনগরে তৃণমূলের সভায় তাঁরা কেউ যোগ দেননি। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘আজ যোগ দিলেন না মানে সব ফুরিয়ে গেল না। আগামীকাল তো আর ফুরিয়ে যায়নি।’’ এ দিনের সভায় পরিবহণমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীও যেন সেই কথাটা আরও স্পষ্ট করে দিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি ঢাক পিটিয়ে কিছু করি না। কিছু দিন আগে নবগ্রামের বিধায়ক কানাইদা আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আগে থেকে কেউ জানতে পারেনি। অপেক্ষা করুন, আগামীতেও অনেকে দলে যোগ দেবেন, কিন্তু কেউ জানতে পারবে না।’’
তিন রাজ্যে কংগ্রেসের তুমুল সাফল্যের পর থেকেই বিজেপি’র জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষের ফোন বন্ধ ছিল। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি অনেকেই। শোনা গিয়েছিল, রবিবারের সভায় গৌরীর সঙ্গে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবীরও যোগ দেবেন। হাওয়ায় ভাসছিল জলঙ্গির সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাকের নামও। রাজ্জাক অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। বলছিলেন, ‘‘মিথ্যে প্রচার।’’
আর হুমায়ুন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলছেন, ‘‘প্রস্তাব আমার কাছেই এসেছিল। তবে বললেই তো আর তৃণমূলে যোগ দিতে পারি না। দলের কোন স্তর থেকে প্রস্তাব আসছে, কোন পদে কেমন সম্মান দিয়ে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে আমায় জানাক ওরা। তার পরে না হয় ভেবে দেখব!’’
হুমায়ুনের যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে শুভেন্দু এ দিন পাল্টা বলেছেন, ‘‘রেজিনগরের একটা মাতব্বর দলে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিল। আমি রবিদা’র (রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল আলম) সঙ্গে কথা বলেছি। ওটা পচা শামুক। পচা শামুক দলে এলে অনেকের পা কাটবে। যে কেউ আসবে বললেই তো আর নেওয়া যায় না।’’ এর পরেই মুচকি হেসে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘জলঙ্গি ও জঙ্গিপুরের সঙ্গে আমার কথা হয়ে গিয়েছে। কেবল চমকের অপেক্ষায় থাকুন।’’
ঘর ভাঙার সেই খেলায় এক সময়ে দলনেত্রীকেও আশ্বাস দিতে হয়েছিল, ‘আর নয়’। তবে তাতেও যে ইতি পড়েনি দিন কয়েক আগে রসুলপুরের সভায় তার প্রমাণ মিলেছে। পরিবহণমন্ত্রীর সেই সভায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন দু’বারের সিপিএম বিধায়ক নবগ্রামের কানাই মণ্ডল। এই অবস্থায় আগামী দিন দলে কারা যোগ দিতে পারেন, সে ব্যাপারে খোলসা না করলেও মুর্শিদাবাদ জুড়ে কংগ্রেসের ঘর ভাঙার কারিগর শুভেন্দু যে তলে তলে কাজ এগিয়ে রেখেছেন, তা মনে করছেন জেলা বিজেপি’র এক নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘ধমকে-চমকে-আশ্বাসে দলে লোক টানতে শুভেন্দুবাবুর জুড়ি নেই, তা বিরোধীরা কম বেশি জানেন। কাজেই বিজেপির ঘাড়েও যে তিনি শ্বাস ফেলবেন তা নতুন কী! এ দিনের পরে আশঙ্কা কিন্তু থেকেই গেল!’’ তৃণমূলের এক তাবড় নেতা বলছেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু যখন বলেছেন, তখন বিরোধী নেতাদের যোগ দেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!’’
রানিনগরের গোধনপাড়া ফুটবল মাঠে এ দিন দলীয় জনসভায় ভিড়ে ঠাসা মাঠ দেখে চনমনে শুভেন্দু নিশানা করেন অধীর চৌধুরীকে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘পাঁচ রাজ্যে বিজেপি’র হারে গোটা দেশ খুশি হয়েছে। আমাদের নেত্রীও খুশি হয়েছেন। কিন্তু খুশি হতে পারেননি অধীর চৌধুরী। কারণ কিছু দিনের মধ্যেই বিজেপিতে যোগ দেবেন তিনি।’’
এমনকি বহরমপুর লোকসভায় ‘কম করেও এক লক্ষ ভোটে হারাব’ বলেও হুমকি দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি জানান, অধীর চৌধুরীর বন্দোবস্ত করে তার পরেই তিনি এই জেলা থেকে সরবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy