Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্ব বাংলার ব্যাগ উঠছে পড়ুয়ার পিঠে

জুতোর পরে এ বার স্কুল ব্যাগ। ঘোষণা হয়েছিল আগেই, জানুয়ারি মাসে টেন্ডার ডেকে ব্যাগের বরাদ্দও দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। পঞ্চম থেকে অষ্টম, রাজ্যের প্রায় ৫৭ লক্ষ পড়ুয়ার কাঁধেই এ বার ব্যাগ তুলে দেওয়া শুরু করছে রাজ্য সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

বছর দুই আগে, বীরভূমে জনসভা সেরে কাঁকসার পথে কনভয় থেকে তাঁর চোখে পড়ে হঠাৎ— বৃষ্টি ভেজা রাস্তা মাড়িয়ে খালি পায়েই গ্রামে ফিরছে এক দঙ্গল পড়ুয়া।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ফোন গিয়েছিল তখনই, ফরমান জারি হয়েছিল, স্কুল পড়ুয়াদের পায়ের জুতো দিতে হবে সরকারকে।

জুতোর পরে এ বার স্কুল ব্যাগ। ঘোষণা হয়েছিল আগেই, জানুয়ারি মাসে টেন্ডার ডেকে ব্যাগের বরাদ্দও দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। পঞ্চম থেকে অষ্টম, রাজ্যের প্রায় ৫৭ লক্ষ পড়ুয়ার কাঁধেই এ বার ব্যাগ তুলে দেওয়া শুরু করছে রাজ্য সরকার। ১৯ মার্চ রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনার রাজ্যের তেইশটি জেলাতেই স্কুল পরিদর্শকদের এ ব্যাপারে নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব পড়ুয়াদের কাঁধে ব্যাগ তুলে দিতে হবে। কোন সংস্থা কোন জেলায় জুতো সরবরাহ করবে, নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তা-ও। মুর্শিদাবাদের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলছেন, “স্কুল শিক্ষা দফতরের চিঠি পেয়েছি। জেলায় ব্যাগ আসেনি। তবে, দিন কয়েকের মধ্যে এসে পড়বে।’’ নদিয়ার পরিদর্শক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ব্যাগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

স্কুল শিক্ষা দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘সাতান্ন লক্ষ পড়ুয়াকে তো এক দিনেই ব্যাগ দেওয়া যাবে না, প্রথম পর্যায়ে ২২ শতাংশ পড়ুয়া ব্যাগ পাবে। পরের ধাপে বাকিরা। আশা করছি, আগামী দু’মাসের মধ্যে সবার কাঁধেই ব্যাগ দেখতে পাবেন।’’

মুর্শিদাবাদে লালগোলা লস্করপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম বলছেন, “প্রথমে জুতো, এ বছরই পড়ুয়াদের খাতা দিয়েছে শিক্ষা দফতর। এ বারে স্কুল ব্যাগ। ভাল তো লাগবেই।” আর ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির রহিদ হাসান বলছে, ‘‘কোনও দিন ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাইনি, খুব মজা হবে!’’ নদিয়ার কালীগঞ্জের বড়কুলবেড়িয়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানসকুমার দাস বলেন, “নির্দেশিকা আসেনি। তবে, এলে বড় উপকার হয় ছেলেমেয়েগুলোর।’’ স্কুলের আসাবুল শেখ মায়ের সঙ্গে থাকে। বলছে, ‘‘মা এ-ওর বাড়ি ধান ভেঙে সংসার চালায়, ব্যাগ কিনে দেবে কী করে!’’ কোথাও অভাব কোথাও বা সচেতনতার অভাব— আর তার জেরে স্কুল শিক্ষকেরা বলছেন, বর্যার মলাটহীন ভেজা বই-খাতা নিয়ে ছেলেপুলেদের দুরবস্থা দেখার ক্লান্তি এ বার মুছবে। বিশ্ব বাংলার ‘ব’ লেখা ব্যাগ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে গিয়েছে। পাঠ্য বই কিংবা খাতা দেওয়ার চল অন্য কয়েকটি রাজ্যেও রয়েছে। তবে স্কুল ব্যাগ? নাহ, দেশের কোথাও দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE