Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Murshidabad

বাবাকে ‘খুন করে’ সটান থানায় হাজির ছেলে

যুবক স্বীকার করে— ‘‘বাবাকে হাঁসুয়া দিয়ে মাথায় কোপ মেরেছি। বাঁচবে বলে মনে হয় না। আমাকে গ্রেফতার করুন।’’

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালবাগ শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩২
Share: Save:

তখনও আড়মোড় ভাঙেনি থানার। শনিবার ভোরে পুলিশের ডিউটি অফিসার থানার মধ্যে শীতে জবুথবু কোনও রকমে বসে আছেন। এই অবস্থায় আচমকা গেটের দায়িত্বে থাকা এক কনস্টেবল এক যুবককে ধরে নিয়ে আসেন। যুবকটি ওই শীতের ভোরেও দরদর করে ঘামছে। ডিউটি অফিসার কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাঁপা কাঁপা গলায় ওই যুবক যা জানাল, তাতে ডিউটি অফিসার শিবনাথ সন্ন্যাসীর পিলে চমকে ওঠার কথা। ওই যুবক স্বীকার করে— ‘‘বাবাকে হাঁসুয়া দিয়ে মাথায় কোপ মেরেছি। বাঁচবে বলে মনে হয় না। আমাকে গ্রেফতার করুন।’’

শুক্রবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদ থানার কুর্মিতলা এলাকায় ওই ঘটনার জেরে পুলিশ সুব্রত কীর্তনিয়া নামে ওই যুবককে আটক করেছে। পুলিশ জানায়, পারিবারিক বিবাদের জেরে বাবাকে খুন করে থানায় গিয়ে নিজের দোষ কবুল করে ছেলে। মৃতের নাম খোকন কীর্তনিয়া (৫৫)। ঘটনার পরেই খোকনের বড় ছেলে সুব্রত কীর্তনিয়া মুর্শিদাবাদ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। তবে মৃতের পরিবারের তরফে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।

লালবাগের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বরুণ বৈদ্য বলেন, ‘‘বাবাকে খুনের কথা থানায় এসে নিজেই কবুল করেছে সুব্রত। তাকে আটক করে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লালবাগের কুর্মিতলার বাসিন্দা খোকন কীর্তনিয়া পেশায় পুরনো জিনিসপত্রের কেনাবেচা করতেন। সুচিত্রা কীর্তনিয়া খোকনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। প্রথম পক্ষের স্ত্রী প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গিয়েছেন। তার পরে মুর্শিদাবাদ থানার ইছাগঞ্জের বাসিন্দা সুচিত্রাকে বিয়ে করেন খোকন। তবে খোকনের তিন ছেলে মেয়ে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে লালবাগেই। কুর্মিতলার বাড়িতে খোকন স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে থাকতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খোকনের অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সে কথা জানতে পেরে গিয়ে স্ত্রী তার প্রতিবাদ জানান। ফলে প্রায় দিন মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে খোকন স্ত্রীকে মারধর করতেন। একই ভাবে ঘটনার রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে আসার পরেই খোকন স্ত্রী সুনীতার মোবাইলে এক জনের মিসড কল দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ফের মারধর শুরু করেন। মাকে মারধর করতে দেখে সুব্রত বাধা দেয় বাবাকে। তা নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এর পরেই হাঁসুয়া হাতে সুব্রতকে খুনের হুমকি দিতে থাকেন বাবা। এর কিছু সময় পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেলেও ফের রাত তিনটে নাগাদ শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর ঝামেলা। সেই সময়ে সুব্রত হাঁসুয়া নিয়ে বাবার মাথায় কোপ মারে। খোকন কীর্তনিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সুব্রত বাড়ি থেকে বেরিয়ে সটান মুর্শিদাবাদ থানায় পৌঁছে আত্মসমর্পণ করে।

ঘটনার পরেই খোকনকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে বহরমপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান হয়। লালবাগ থেকে বহরমপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান খোকন। মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক খোকনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

সুচিত্রা জানান, রোজ মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে আমাকে মারধর করত। ওই রাতে আমাকে ফের মারধার করার সময়ে ছেলে সহ্য করতে না পেরে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। সুব্রত খুন করবে বলে করেনি। তবে দাদার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না খোকনের ভাই নীলাঞ্জন কীর্তনিয়া। তিনি বলছেন, ‘‘সৎকারপর্ব মিটে যাওয়ার পরেই মুর্শিদাবাদ থানায় খুনের মামলা দায়ের করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Father Son Death Murder Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy